জামালপুরে তীব্র শীত, হাসপাতালে রোগীদের ভীড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
শাওন মোল্লা , জেলা প্রতিনিধি- জামালপুর
প্রকাশিত: রবিবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২৫ ১১:২১ পূর্বাহ্ন
জামালপুরে তীব্র শীত, হাসপাতালে রোগীদের ভীড়

জামালপুরে তীব্র শীতের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে। সকালে এবং সন্ধ্যার পরপরই কনকনে শীতল বাতাসে হিম হয়ে যাচ্ছে জনজীবন। শীতের এ বৈরী আবহাওয়ায় শিশু এবং বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টের মতো নানা রোগে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মাত্র ২৪টি শয্যা থাকলেও বর্তমানে সেখানে প্রায় শতাধিক শিশু ভর্তি রয়েছে। 


সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি সতেরো মাসের ইমরানের মা আকলিমা আক্তার বলেন, তার ছেলের জ্বর, সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। শীতের সময় এমন অসুস্থতা যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকলিমার মতো অনেক মাকেই সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে আসতে দেখা গেছে। আশপাশের অনেক শিশুই একই সমস্যায় ভুগছে বলে জানান তিনি। 


শহরের আরেক বাসিন্দা হাবিবা তার মেয়েকে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। শিশু ওয়ার্ডে জায়গার অভাবে মেয়েকে নিয়ে নিচে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। হাবিবা বলেন, রোগীর এত ভিড় যে চিকিৎসা সেবা পেতে দেরি হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। 


২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান জানান, শীতের শুরু থেকেই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু রোগী বেশি আসছে। প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। মাত্র ২৫ শয্যার বিপরীতে এত রোগীর চাপে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। 


শীতজনিত রোগে বয়স্করাও পিছিয়ে নেই। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং জ্বরের মতো সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীর দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক এবং সেবাকর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। 


জামালপুরের তীব্র শীতের সঙ্গে যোগ হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা সংকট। চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের তীব্রতা কমলে রোগীর চাপও কমে আসবে। তবে শীতকালীন রোগ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের উষ্ণ পোশাক পরানো এবং ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 


অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা হাসপাতালের সীমিত শয্যা এবং ওষুধ সরবরাহের অভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা সরকারের কাছে হাসপাতালে সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। শীতের সময় যাতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পায়, সে বিষয়েও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 


শীতের তীব্রতায় জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত, তেমনি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ সময়ে স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন এ সমস্যার সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে সাধারণ মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।