টঙ্গীতে মৎস্যজীবী দলের কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড, রাজনৈতিক উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি , গাজীপুর
প্রকাশিত: রবিবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৪:১৪ অপরাহ্ন
টঙ্গীতে মৎস্যজীবী দলের কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড, রাজনৈতিক উত্তেজনা

গাজীপুরের টঙ্গীতে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের মহানগর কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার ভোরে টঙ্গীর বনমালা এলাকায় অবস্থিত কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে এবং পুরো কার্যালয়টি পুড়ে যায়। স্থানীয়রা হঠাৎ করে আগুন দেখে দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তবে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে কার্যালয়টি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  


এ ঘটনায় মৎস্যজীবী দলের গাজীপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আবুল কাশেম খান শনিবার রাতে টঙ্গী পূর্ব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং এই অগ্নিকাণ্ডের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। তিনি দাবি করেন, ঘটনাস্থলে ‘জয় বাংলা’ ও ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ স্লোগান লেখা ছিল, যা তাদের অভিযোগকে আরো জোরালো করেছে।  


আন্দোলনরত মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে বনমালা এলাকায় মানববন্ধন করেন। তারা এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এবং এটি একটি পরিকল্পিত নাশকতা হিসেবে তুলে ধরেন। তাদের মতে, এই ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে এবং এর মাধ্যমে তাদের দলকে দুর্বল করা হয়েছে।  


গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারও এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, "ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি।" তিনি জানান, পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর তদন্ত শুরু হয়েছে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।  


এদিকে, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ, দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ দল পাঠানো হয়েছে এবং তারা ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করছে।  


স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক মাস ধরে গাজীপুরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তারই একটি অংশ হতে পারে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক চাপের মাঝে এই ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে।  


বিক্ষুব্ধ মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা এ ঘটনাকে তাদের বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখছেন এবং এর মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছেন। তারা আরো জানিয়েছেন, এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তারা।  


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না, যার কারণে আগুন লাগানোর সময় ঘটনাটি কোনোভাবে ক্যামেরাবন্দি হয়নি। তবে পুলিশ স্থানীয়দের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ঘটনার তদন্ত করছে এবং কিছু সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলছে।  


এছাড়া, স্থানীয় জনগণের মধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। একদিকে মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।  


গাজীপুরের এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুধু স্থানীয় রাজনীতিতে নয়, পুরো জেলার রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তবে পুলিশ ঘটনাটি দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছে। তারা সকল পক্ষকে শান্ত থাকার এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে।  


এদিকে, এই ঘটনা থেকে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা কেবল গাজীপুরে নয়, বরং সারা দেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দিনগুলিতে এই ঘটনার ফলশ্রুতিতে নতুন সংঘর্ষ সৃষ্টি হতে পারে, যা স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতির গতিবিধিতে প্রভাব ফেলতে পারে।  


এখনো পর্যন্ত মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করছেন, এবং তারা এই ঘটনাকে সরকারের বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ হিসেবে তুলে ধরছেন। পুলিশের তদন্তের পরই এই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে, যা জনমত ও রাজনীতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।