রাজধানীর শাহবাগে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে এই ঘটনায় পাঁচজন শিক্ষক আহত হন। আহতদের মধ্যে নারী শিক্ষক মারুফা আক্তার (২৫) সহ আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরিদুল ইসলাম (৩০), আমিনুল (৩৫), মিজানুর রহমান (৩৫) অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। আহতদের ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযোগ করা হয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে স্মারকলিপি দিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন, তবে শাহবাগে পৌঁছানোর সাথে সাথে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিপেটা করে। পুলিশ এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামানসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে, যা আন্দোলনকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এই হামলার ফলে মোট ৩০-৪০ জন শিক্ষক আহত হন, যার মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা গত আটদিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট করে আসছিলেন। তাদের দাবি ছিল, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোর জাতীয়করণ। তাদের দাবি, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি অনুমোদন এবং বেতন কাঠামো দেওয়া হোক, যাতে শিক্ষকদের বেতন ও কাজের পরিবেশ উন্নত হয়।
এই ঘটনায় আহত মাদ্রাসা শিক্ষক মো. বেলায়েত হোসেন জানান, তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে রওনা হন, তবে শাহবাগে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। তিনি বলেন, "এটি আমাদের ন্যায্য দাবি ছিল, কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে। আমরা এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চাই।" আহত শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তারা দ্রুত চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ ঘটনার পর, ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, "দুপুরে পাঁচজন মাদ্রাসা শিক্ষক হাসপাতালে আসেন, আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানিয়েছি।" পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
এই হামলার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, পুলিশি হামলার মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের মৌলিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক পরিবেশে অগ্রহণযোগ্য। তারা আরো বলছেন, শিক্ষকদের দাবি ন্যায্য, এবং তাদের প্রতি এই ধরনের আক্রমণ কখনই মেনে নেওয়া উচিত নয়।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এই ঘটনার বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘটনার তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন কিছু সূত্র।
মাদ্রাসা শিক্ষকরা বলছেন, তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, যতদিন না তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। তারা জানিয়েছেন, এমন কোনো পরিস্থিতি তারা সৃষ্টি করবেন না, যাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়, তবে তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।
এছাড়া, আহত শিক্ষকদের চিকিৎসা চলমান, এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন দেশে শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে আলোচনাও চলছে, এবং মাদ্রাসা শিক্ষকদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য বিভিন্ন সরকারী পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে।
এই ঘটনার পর, মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতির আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। তাদের দাবি, শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করতে না পারলে দেশে শিক্ষাব্যবস্থা আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিক্ষকদের আন্দোলনটি দেশের বৃহত্তর শিক্ষাব্যবস্থার একটি অংশ, এবং তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানো প্রয়োজন, যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও উন্নত এবং কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।