প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সরকারের যে প্রতিশ্রুতি জানালেন- ডা. বিধান রঞ্জন রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি - চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: রবিবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৯:৪০ অপরাহ্ন
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সরকারের যে প্রতিশ্রুতি জানালেন- ডা. বিধান রঞ্জন রায়

শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, শিক্ষকদের নিজেদের পেশাকে শুধুমাত্র অর্থমূল্যে বিবেচনা করা উচিত নয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠা ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষকদের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে। রবিবার চট্টগ্রাম নগরীর সার্কিট হাউসে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় তিনি শিক্ষকদের শ্রদ্ধার আসন অটুট রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভালো মানের শিক্ষার্থী তৈরি করতে হলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের আরও আন্তরিক হতে হবে।  


বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে নিবন্ধন না থাকা বিদ্যালয়গুলোকে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ বন্ধের শর্ত আরোপ করা হবে। এভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে প্রাইমারি শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তবে এই প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। 


তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের বেতন ও পদোন্নতি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে, যা তাদের কাজের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে দীর্ঘ কর্মজীবনে পদোন্নতি না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো সমর্থনযোগ্য নয়। সরকার এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে এবং কনসালটেন্ট কমিটি গঠন করে এই ইস্যুগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। 


প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও ভাতার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রাইমারি শিক্ষকদের চাকরিকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হলেও তাদের গ্রেড বাড়ানো হয়নি। ফলে তারা সেকেন্ড ক্লাস মর্যাদার যোগ্য বেতন ও ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই সমস্যা নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।  


শিক্ষকদের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে শ্রেণিকক্ষে দায়িত্ব পালনে কোনো ফাঁকি দেওয়া উচিত নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শিশুর প্রাথমিক জ্ঞান ও নৈতিকতা শিক্ষকের কাছ থেকেই আসে। 


পদোন্নতি ও লোকবল সংকট নিয়ে তিনি বলেন, শূন্য পদ পূরণে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে পদোন্নতি আটকে যাওয়ার কারণ হিসেবে পরস্পর বিরোধী দাবি এবং আদালতের মামলাকে দায়ী করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সহকর্মীদের মধ্যে করা মামলা। 


তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় লোকবল সংকট দূর করতে এবং শূন্যপদ পূরণের জন্য নতুন নিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হবে, যাতে তারা শ্রেণিকক্ষে আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।  


সভায় তিনি শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে শিক্ষকদের গুরুত্ব ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিক্ষকতা পেশা কোনো সাধারণ কাজ নয়, এটি শিশুদের জীবনের ভিত্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।