সাতক্ষীরার আশাশুনি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার জনপ্রিয় লাটিম খেলা। এক সময় শিশু-কিশোরদের প্রধান বিনোদনের মাধ্যম ছিল এই খেলা। বর্তমানে মোবাইল গেমসের প্রতি আসক্তি এবং আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারে নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহ্যবাহী খেলা ভুলতে বসেছে।
লাটিম খেলা ছিল গ্রামের ছেলেমেয়েদের অন্যতম প্রিয় বিনোদন। একজন খেলতে চাইলে এটি কতক্ষণ ঘোরানো যায় তা নিয়ে চলত পরীক্ষা। আবার দলবদ্ধ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী খেলোয়াড় হারানো লাটিমের মালিক হত। কাঠমিস্ত্রিরা লাটিম তৈরি করে বিক্রি করত, আর ছোটরা কিনে এনে ঘুরানোর জন্য ব্যবহার করত চিকন দড়ি বা লেপতি।
খেলার শুরুতে সমতল মাটিতে একটি বৃত্ত আঁকা হত, যা বিশেষ নিয়ম মেনে তৈরি করা হতো। লাটিমের নকশা অনুযায়ী মাটিতে আঁকা বৃত্তের মধ্যে প্রতিযোগীরা তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করত। একেকজন খেলোয়াড় যখন দক্ষতার সঙ্গে লাটিম ঘোরাত, সেটি দেখে আনন্দিত হত গ্রামের মানুষ।
গ্রামাঞ্চলে এখনও বিচ্ছিন্নভাবে লাটিম খেলার প্রচলন থাকলেও তা খুবই সীমিত। হাটে-মাঠে লাটিম বেচাকেনা দেখা গেলেও খেলোয়াড়দের সংখ্যা অনেক কম। আশাশুনির ধারাভাষ্যকার আবু মুছা বলেন, একসময় লাটিম খেলা ছিল আমাদের আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে নতুন প্রজন্ম এসব খেলা থেকে দূরে সরে গেছে।
লাটিম খেলার মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটত। এটি কেবল বিনোদনের মাধ্যম ছিল না, বরং শিশুরা একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলত এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিখত শৃঙ্খলা ও কৌশল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব খেলা ফিরিয়ে আনতে হলে পরিবার এবং স্কুল পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। মোবাইল গেমসের প্রতি আসক্তি কমিয়ে ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।
লাটিম খেলা যেমন আমাদের সংস্কৃতির অংশ, তেমনি তা আমাদের শৈশবের মধুর স্মৃতি। এটি হারিয়ে গেলে গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি মূল্যবান অধ্যায়ও বিলীন হয়ে যাবে।
এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা এবং উৎসবে লাটিম খেলা আয়োজন করে শিশুদের এই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করার সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।