কালুখালীতে চাঁদা না পাওয়ায় কলেজ শিক্ষক ও তার পরিবারের ওপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মইনুল হক মৃধা-রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: রবিবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
কালুখালীতে চাঁদা না পাওয়ায় কলেজ শিক্ষক ও তার পরিবারের ওপর হামলা

রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলায় চাঁদার টাকা না পাওয়ায় এক প্রভাষক ও তার পরিবারের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় প্রভাষক মো. সাদ্দাম হোসেন এবং তার স্ত্রী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও ফুপি শ্বাশুড়ি গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বাস্তখোলা গ্রামে এই হামলা ঘটে। ঘটনায় ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ, তবে মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এখনো বাকি রয়েছে। 


হামলার শিকার প্রভাষক সাদ্দাম হোসেন পাংশা সরকারি কলেজে খন্ডকালীন ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তিনি বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের মো. বাদশা খানের ছেলে। সাদ্দামের অভিযোগ, প্রায় দুই মাস আগে তার শ্বশুর বাড়ির এলাকাতেই স্থানীয় কালাম ওরফে ড্যাবলান তার কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন। বিষয়টি তিনি বিএনপির কয়েকজন নেতার কাছে জানালে তারা বিষয়টি মীমাংসা করেছিলেন। তবে ঘটনার দিন চাঁদার টাকা না পাওয়ায় কালাম ও তার সহযোগীরা তাকে এবং তার পরিবারকে আক্রমণ করেন।


সাদ্দাম আরও জানান, ঘটনার দিন তিনি তার শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। রাত ৯টার দিকে তিনি শ্বশুরের সাথে কথা বলছিলেন, এমন সময় ড্যাবলান এবং তার সহযোগীরা ঘরের মধ্যে ঢুকে তাকে বাইরে ডেকে নিয়ে মারধর শুরু করে। তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন, যারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সাদ্দাম এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। সাদ্দামের স্ত্রী, শ্বশুর এবং ফুপি শ্বাশুড়ি হামলাকারীদের হাতে আহত হন। হামলাকারীরা সাদ্দামকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিস্তল বের করলেও সাদ্দামের সাথে ধস্তাধস্তি করে গুলি করতে ব্যর্থ হয়। তখন স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।


এ বিষয়ে সাদ্দাম জানান, তিনি সুষ্ঠু বিচার চান এবং হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানান। সাদ্দাম বর্তমানে পাংশা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুলু বেগম (৭৫) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। 


এ ঘটনার পর, অভিযুক্তদের মধ্যে বক্কার মন্ডল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, আওয়ামী লীগের আমলে তারা তাদেরকে মেরেছিল, তাই তারা এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে। তিনি আরও জানান, হামলাকারীরা ক্ষমতায় থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলছে না।


স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অভিযুক্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি চালাচ্ছে। তবে আহতরা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়, বলেও তারা জানান। অভিযুক্তরা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানানো হয়। 


কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে এবং আরও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান রয়েছে। 


এদিকে, অভিযোগ করা হয়েছে যে, অভিযুক্ত কালাম ওরফে ড্যাবলানের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ডাকাতি, মারামরি সহ তিনটি মামলা রয়েছে। তার ভাই সম্রাটও একাধিক মামলায় জড়িত। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। 


এই ঘটনায় এলাকার জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এমন অশান্ত পরিবেশে কোনো সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করেন না। তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।


সাদ্দাম হোসেন এবং তার পরিবারের সদস্যরা হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে আতঙ্কিত এবং হতাশ। তারা আশা করছেন, তাদের প্রতি ন্যায্য বিচার প্রদান করা হবে। তবে, স্থানীয় এলাকায় বর্তমান পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ এবং সবার মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। 


স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চাঁদাবাজি এবং স্থানীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করেছে যেখানে সাধারণ মানুষ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তারা প্রশাসনের কাছে আরও তৎপরতা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন, যাতে এই ধরনের ঘটনাগুলি ভবিষ্যতে রোধ করা যায়। 


এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন জন হলেন মোহাম্মদ রাজিব মন্ডল (৩৮), তার পিতা মক্কার মন্ডল (৬০), এবং রফিক মন্ডল (৪৫)। তবে, অন্য অভিযুক্তরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে এবং শিগগিরই তাদের আটকের জন্য অভিযান সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করছে।