আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামে সাইকেল মেকানিক অনিমেষের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নতুন মোড় নেওয়া শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে নিহতের মৃতদেহ গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, যা হত্যাকাণ্ডের রহস্য আরও ঘনীভূত করেছে। তার মা শেফালী রানী সরকার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন, এবং পুলিশ সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করেছে।
অনিমেষ (২৫) ছিলেন শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের নিরঞ্জন সরকারের ছেলে। তিনি বাড়ির পাশের বাজারে সাইকেল মেকানিকের কাজ করতেন এবং শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানে ছিলেন। রাত হওয়ার পর, তিনি বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ শুরু করেন। পরদিন, শনিবার সকালে খালেক মোল্যার ছেলে বাবলুর বাড়ির পাশের একটি নিমগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতদেহটি গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ছিল, যা হত্যার ঘটনা সন্দেহের জন্ম দেয়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত পায়। মৃতদেহের পাশ থেকে অনিমেষের ব্যবহৃত মোবাইল, জাম্পার, জুতা, মানিব্যাগ, গ্যাস লাইট, সিগারেট ও তার কাজে ব্যবহৃত ট্রাউজার উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশের সন্দেহ ছিল যে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কয়েকজন লোক জড়িত থাকতে পারে, এবং তারা ঘটনাস্থলের আশেপাশে আরও অনুসন্ধান চালায়। মৃতদেহের পায়ে কাদামাটি এবং গায়ে মাটি লেগে ছিল, যা স্থানীয়দের মতে, হত্যাকাণ্ডের পর তাকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নোমান হোসেন এবং তালা সার্কেলের এএসপি হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেন।
এদিন রাতে, নিহত অনিমেষের মা শেফালী রানী সরকার থানায় এসে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে রুজু করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তের পর, সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন, মৃত ওমর সিদ্দিক মল্লিকের ছেলে মলেক মল্লিক, আঃ খালেক মোল্যার ছেলে বাবলু আক্তার মোল্যা, এবং আঃ রাজ্জাক সরদারের ছেলে জিল্লুর রহমান।
এই তিনজনকে আটক করার পর, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিচিতদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ ঘটেছে। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, আশাশুনি এবং আশপাশের এলাকায় হত্যার এই ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সম্প্রতি ওই এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং প্রশাসনের প্রতি তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, এবং তারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশা করছে যে, খুব শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ এবং হত্যাকারীদের পরিচয় উদঘাটিত হবে।
এই ঘটনা স্থানীয় এলাকায় তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছে। অনেকেই দাবি করছেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য প্রশাসনকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তবে, তদন্ত শেষে যদি এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো গভীর কারণ থাকে, তা বের করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সময় দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে, যাতে এলাকাবাসী একটি সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা করতে পারে।
আশাশুনির এই হত্যাকাণ্ডটি সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। তবে, এলাকাবাসীর আশা, শীঘ্রই তারা সত্য জানার সুযোগ পাবে, এবং অপরাধীরা যথাযথ শাস্তি পাবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।