ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের করা মামলায় হাজিরা না দেওয়ার কারণে রোববার আদালত এই পরোয়ানা জারি করেন। পরীমনি জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি। এই পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে নিজের অবস্থান জানিয়ে পরীমনি বলেন, "আমি শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। বিছানা থেকে উঠার শক্তিও পাচ্ছি না, তাই আদালতে যেতে পারিনি।"
পরীমনি আরও জানান, এর আগে একবার তিনি আদালতে যেতে পারেননি তার মৃত নানুর কারণে। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন, কারণ তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। তিনি বলেন, "শরীর অসুস্থ থাকলে কিছুই করার থাকে না। আমি তো আদালতে যেতে চাইতাম, কিন্তু শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি।"
পরীমনি গণমাধ্যমে আরও জানান, আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য তিনি তার আইনজীবীকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, তাকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হতো। তবে তিনি নিজেকে সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করে আদালতে উপস্থিত হতে চেয়েছিলেন।
এছাড়াও, পরীমনি বলেন, "মাতৃত্বকালীন সময়ে আমি কখনো আদালতে যেতে বাদ দিইনি। এর আগেও আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য কোনো সমস্যা হয়নি।" তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তার শারীরিক অসুস্থতা একান্তই দায়ী।
মামলাটি শুরু হয় ২০২১ সালের ৬ জুলাই, যখন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ পরীমনির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পরীমনি ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন ক্লাবে অ্যালকোহল পান করে এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ না করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। মামলায় আরও বলা হয়, পরীমনি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দায়ের করার চেষ্টা করেন এবং অন্যদের হয়রানি করেন।
এছাড়া, ২০২১ সালের ৯ জুন রাতে পরীমনি এবং তার সহযোগীরা সাভারের বোট ক্লাবে প্রবেশ করেন এবং সেখানে অ্যালকোহল পান করেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন জানান, পরীমনি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তবে ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি নামে আরেক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল, ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এবং পরীমনি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ২৫ জুন, পরীমনি এবং তার সহযোগী আদালতে হাজির হয়ে জামিন পান। এরপরও একাধিক বার আদালত পরীমনিকে তলব করলেও তিনি উপস্থিত হননি।
রোববার, অবশেষে পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরীমনি এই পরোয়ানার বিষয়টি জানতে পারেন ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে। তিনি জানান, তিনি আগেই তার অসুস্থতার কারণে আদালতে যেতে পারেননি, এবং এখনো তার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়।
এ ব্যাপারে আইনজীবীরা জানান, পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তাকে আদালতে হাজির করা হবে। যদি পরীমনি শারীরিকভাবে সুস্থ না হন, তবে তার আইনজীবীরা তার অসুস্থতার বিষয়টি আদালতে তুলে ধরবেন। তবে আদালত সূত্রে জানা গেছে, পরীমনির বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করায় তার পক্ষে আদালতে উপস্থিত হওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনাটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে একজন অভিনেত্রী আদালতের আদেশ অমান্য করে না আসার কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি পুরো শোবিজের মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, পরীমনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা আশা করছেন, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং আদালতে যথাসময়ে উপস্থিত হতে পারবেন। তবে, এই পুরো ঘটনা তার জন্য নতুন এক দিক খুলে দিয়েছে, যা তার ক্যারিয়ারে নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।
মামলার পরবর্তী শুনানিতে পরীমনির পক্ষে তার আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন কিনা, তা সময়ের সাথে জানা যাবে। তবে পরীমনির বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা শোবিজ জগতে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে, যা বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্ব পাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।