দুনিয়াতে মানুষ যখন জিকিরের মজলিস বসে তখন তা বেহেশতের বাগানে পরিণত হয়ে যায়। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন সুসংবাদই দিয়েছেন। আবার যারা জিকিরের মজলিসে বসে তখন তাদেরকে খাবার গ্রহণের কথাও বলেছেন। আর সে খাবার হলো- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। জিকিরের মজলিসে কিছু মুহূর্ত বসার মর্যাদা এত বেশি যে, আল্লাহ তাআলা মজলিসে বসা ব্যক্তিদের সব চাহিদা পূরণ করে দেন। চলার পথে জিকিরের মজলিস দেখে কোনো গোনাহগার সামান্য সময়ের জন্য বসলেও আল্লাহ নিশ্চিত এ গোনাহগার ব্যক্তিকেও ক্ষমা করে দেন। জিকিরকারী বান্দাদের এসব খোঁজ খবর রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা একদল নির্ভীক ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কিছু অতিরিক্ত পরিভ্রমণকারী ফেরেশতা আছেন (যারা বিশ্বে ঘুরে) জিকিরের মজলিসের খোঁজ খবর রাখেন। যদি কোনো জিকিরের মজলিস পেয়ে যান, তখন তাদের সঙ্গে (জিকিরে) বসে পড়েন এবং তাঁদের একে অপরকে পাখা দিয়ে ঘিরে ধরেন। এভাবে (পাখা দিয়ে ঘিরে ধরে) তারা আসমান পর্যন্ত পূর্ণ করেন। যখন মজলিসের (জিকিরকারী) মানুষের বিচ্ছিন্ন হয়ে যান (মজলিস শেষে চলে যান) তখন তারা উর্ধ্বে ওঠেন। মহান আল্লাহ, যিনি সবই জানেন। তিনি তাদের (ফেরেশতাদের) জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কোথা থেকে এসেছ?
তারা (ফেরেশতারা) বলেন, ‘আমরা দুনিয়ায় আপনার কিছু বান্দার কাছ থেকে এসেছি, যারা আপনার ‘তাসবিহ’ (সুবহানাল্লাহ), ‘তাকবির’ (আল্লাহু আকবার), ‘তাহলিল’ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), ‘তাহমিদ’ (আলহামদুলিল্লাহ) বলেছেন এবং আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
(তখন) আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কী প্রার্থনা করেছেন? তারা (ফেরেশতারা) বলেন, ‘তারা আপনার জান্নাত প্রার্থনা করেছেন?
(তখন) আল্লাহ বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? তারা (ফেরেশতারা) বলেন, ‘হে প্রভু! ‘না’, তারা জান্নাত দেখেনি। আল্লাহ বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখতো তবে কী হতো? ফেরেশতারা বলবেন, তারা আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতো।আল্লাহ বলবেন, তারা আমার কাছে কি আশ্রয় চেয়েছে? ফেরেশতারা বলবে, তারা জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। আল্লাহ বলবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন, ‘না’, হে প্রভু! (তখন) আল্লাহ বলবেন, তারা যদি আমার জাহান্নাম দেখতো তবে কী অবস্থা হতো? তাছাড়া এ বান্দারা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে। (তখন) আল্লাহ বলবেন, ‘আমি তাদের ক্ষমা করলাম। তাদের প্রার্থনা কবুল করলাম। তারা যা থেকে আশ্রয় চায় তা থেকে তাদেরকে আশ্রয় প্রদান করলাম।
ফেরেশতাগণ বলবেন, ‘হে প্রভু! তাদের মধ্যে একজন অন্যায়কারী-গোনাহগার বান্দা আছে যে, মজলিস অতিক্রম করে যাচ্ছিল, তাই সে (জিকিরের মজলিসে) একটু বসেছে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাকেও ক্ষমা করলাম; তারা এমন সম্প্রদায় যাদের সঙ্গে কেউ বসলে সে দুর্ভাগা হবে না।’
উল্লেখিত হাদিস থেকে বুঝা গেল, জিকিরের মজলিস হলো দুনিয়ায় জান্নাতের বাগান। জিকিরের বাক্যগুলো হলো জান্নাতের বাগানের খাবার। আর যারা এ মজলিসে বসে সে গোনাহগার হলেও আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। তাকে জান্নাতে আশ্রয় দান করবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ায় জিকিরের হালকায় বসার মাধ্যমে আখেরাতে মহাসাফল্য লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।