প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ১০:১১
আধুনিক সমাজে মুসলিম পরিচয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে হালাল ও হারাম বিষয়ে অস্পষ্টতা। প্রযুক্তির উৎকর্ষ, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিত্যনতুন পণ্যের ছড়াছড়ির যুগে অনেক কিছুই আমরা ব্যবহার করি বা গ্রহণ করি—যার বৈধতা নিয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবি না। অথচ একজন মুমিনের জন্য হালাল-হারামের বোধ জাগ্রত করাই হলো তাকওয়ার মূল ভিত্তি।
হাদীসে এসেছে, “হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ দুয়ের মাঝে কিছু সন্দেহযুক্ত বিষয় রয়েছে, যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থাকে, সে নিজের দ্বীন ও ইজ্জতকে রক্ষা করে” (সহীহ বুখারী: ৫২)। এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, শুধু হারাম এড়িয়ে চললেই নয়, বরং সন্দেহযুক্ত জিনিস থেকেও বিরত থাকা একজন মুত্তাকীর পরিচয়।
আধুনিক ব্যাংকিং, ফ্যাশন, খাদ্যপণ্য বা অনলাইন ইনকামের মতো অসংখ্য ক্ষেত্রে হালাল-হারাম নির্ধারণে আমরা বহুবার অনিশ্চয়তায় পড়ি। তাই মুসলিম সমাজে ইসলামি শিক্ষার বিস্তার এবং ফিকহ বা শরিয়াহ ভিত্তিক সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই।
ইসলামে অর্থ উপার্জন শুধু হালাল হওয়াই যথেষ্ট নয়, তা খরচেও হালাল থাকা জরুরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ হালাল ব্যবসা করে আয় করলেও তা যদি সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে, তবে সে হারাম কাজে সহায়তা করছে। এমনকি সামাজিক জীবনে চুক্তি, চাকরি, অনুদান বা উপহার গ্রহণেও হালাল-হারামের সীমারেখা বজায় রাখা আবশ্যক।
ইবনে কাসির রহ. বলেন, “যদি কেউ সন্দেহযুক্ত বিষয়ে আল্লাহর ভয়ে বেঁচে থাকে, আল্লাহ তাকে হারামের কাছ থেকে রক্ষা করেন এবং তার অন্তরে এক প্রকার আলো সৃষ্টি করে দেন যা হক-বাতিল পার্থক্য করতে সক্ষম হয়।” এই আলোই একজন মুসলমানকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে।
আমরা যদি আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে হালাল-ভিত্তিক করে গড়ে তুলতে পারি, তবে বরকতের দরজা খুলে যাবে। সন্তানদের মধ্যে নৈতিকতা বৃদ্ধি পাবে, দাম্পত্য জীবনে শান্তি আসবে, আর আত্মিক প্রশান্তি জাগবে।
অতএব, আজকের দুনিয়ায় একজন সচেতন মুসলমানের উচিত প্রতিদিনের লেনদেন, খাবার, পোশাক, যোগাযোগ, এমনকি বিনোদন মাধ্যমেও হালাল-হারামের দৃষ্টিভঙ্গি রাখা। তবেই আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তা আমাদের জীবনে নেমে আসবে।