প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৭
আল্লাহর রাসুল (সা.) এর জীবন আমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ পথনির্দেশ। দুনিয়াবি ব্যস্ততার এই যুগে মানুষ যখন অশান্তির ভেতর দিয়ে দিন পার করছে, তখন রাসুল (সা.) এর জীবনের ছোট ছোট শিক্ষা আমাদের জন্য হতে পারে অমূল্য দিকনির্দেশনা। বিশেষ করে তাঁর “অল্পতেই সন্তুষ্টি” এবং “সচ্চরিত্র” চর্চা ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য স্থায়ী আদর্শ। আজকের দিনে এই দুটি গুণের চর্চা করলে পারিবারিক শান্তি, সামাজিক ঐক্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব।
রাসুল (সা.) বলতেন, “তুমি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের শরীর সুস্থ পাও, দিনের খাবার যদি থাকে এবং রাতের নিরাপত্তা থাকে—তাহলে তুমি পৃথিবীর সব কিছু পেয়েছো।” (তিরমিজি)। এই হাদীস আমাদের শেখায় যে মূলত শান্তি ও স্বাস্থ্যের চেয়ে বড় কোনো সম্পদ নেই। অথচ আমরা দিনরাত ছুটছি দুনিয়ার অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের জন্য, যার বেশিরভাগই আমাদের প্রয়োজন নয় বরং অস্থিরতার কারণ।
রাসুল (সা.) এর চরিত্র ছিল এমন যে, তিনি কারো সঙ্গে কখনো রূঢ় ব্যবহার করতেন না, কাউকে ছোট করে দেখতেন না। তিনি এমনকি সেই ব্যক্তিকেও সম্মান দিতেন যে তাঁকে অপছন্দ করত। তাঁর মুখ থেকে কখনো খারাপ শব্দ বের হতো না, এবং তিনি কেবল মুখেই না, বরং কাজেও ছিলেন সত্যবাদী, ধৈর্যশীল ও নম্র।
এই যুগে যখন সামান্য মতভেদে মানুষ সম্পর্ক ছিন্ন করছে, একে অপরকে অপমান করছে, তখন রাসুলের (সা.) সহনশীলতা ও উদারতা আমাদের শেখায় কিভাবে মানুষের সঙ্গে আচরণ করতে হয়। আজ আমাদের পরিবারে, সমাজে, এমনকি মুসলিম উম্মাহর ভেতরেও বিভাজন ও বিদ্বেষ দেখা যায়, এর প্রধান কারণ হলো রাসুল (সা.)-এর চরিত্র থেকে দূরে সরে যাওয়া।
হাদীসে এসেছে, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যার চরিত্র সর্বোত্তম।” (বুখারী ও মুসলিম)। তাই শুধু নামাজ, রোযা নয় — চরিত্রের মাধ্যমেই একজন প্রকৃত মুসলমানের পরিচয় প্রকাশ পায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আজ অনেকে ইবাদত করে কিন্তু চরিত্রে রাসুলের আদর্শ অনুপস্থিত। ফলে সমাজে ইসলাম ঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
রাসুল (সা.) সব সময় সরল জীবন যাপন করতেন, অল্পতেই খুশি থাকতেন। আমাদের চাহিদা যত বাড়ছে, অশান্তিও তত বাড়ছে। তাই রাসুলের শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের উচিত অল্পতে সন্তুষ্ট থাকা এবং অন্যদের অধিকার রক্ষা করে চলা।
সবশেষে বলা যায়, বর্তমান সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের ব্যক্তি জীবনে রাসুল (সা.)-এর এই দুটি গুণ — অল্পতে সন্তুষ্টি ও সচ্চরিত্র — গভীরভাবে ধারণ করতে হবে। কেবল তাহলেই আল্লাহ আমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করবেন এবং সমাজে ফিরে আসবে প্রকৃত ইসলামি মূল্যবোধ।