প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ১২:১৫
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের ফটকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রিয়াংকা দত্ত লাবণীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ অফিস আদেশ লংঘন করে মূল কর্মস্থলে যোগদান না করে একই প্রতিষ্ঠানে ডেপুটেশনে থাকার অভিযোগ উঠেছে। জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বারবার চেষ্টা করেও তাকে মূল বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে পারছে না, ফলে বিদ্যালয়ের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রিয়াংকা দত্ত লাবণীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অফিস আদেশ অমান্যের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ ও বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে এবং তাকে তিরস্কার দন্ড প্রদান করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শামসুর রহমান শর্তসাপেক্ষে প্রিয়াংকা দত্ত লাবণীকে চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্তি প্রদান করেন, যেখানে একটি শর্ত ছিল সংযুক্তি প্রদানকৃত বিদ্যালয়ে শিক্ষক যোগদানের সাথে সাথে অফিস আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে শিক্ষক যোগদান সত্ত্বেও তিনি মূল কর্মস্থলে যোগদান না করে অফিস আদেশ অমান্য করে চন্দ্রনাথ বিদ্যালয়েই কাজ চালিয়ে গেছেন। ফলে ফটকী বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় বিদ্যালয় ও এসএমসি সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রিয়াংকা দত্ত লাবণীকে একাধিকবার মৌখিকভাবে তাগাদা দিয়েও তাকে মূল বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা যায়নি। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, অফিস আদেশ অনুযায়ী সংযুক্তি প্রদানকৃত বিদ্যালয়ে শিক্ষক যোগদান করলে আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও প্রিয়াংকা দত্ত লাবণী সেটি মানছেন না। বিদ্যালয়ের বেতন বিলেও তার স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক ও কমিটি বেতন বিল জমা দিচ্ছেন তার স্বাক্ষর ব্যতীত।
প্রিয়াংকা দত্ত লাবণীর বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগেও পত্র জমা দেওয়া হয়েছে। স্কুল কমিটি ও শিক্ষাবিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, অফিস আদেশ অমান্য করে দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে ডেপুটেশনে থাকার মতো পরিস্থিতি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। একই সঙ্গে শিক্ষকদের একাধিকবার সংযুক্তি দেওয়ার নিয়ম লঙ্ঘনও এ ঘটনায় উঠে এসেছে।
শিক্ষক প্রিয়াংকা দত্ত লাবনী বলছেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মূল কর্মস্থলে ফিরছেন না কারণ প্রাণনাশের আশঙ্কায় বিদ্যালয়ে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রটেকশন দাবি করেছেন। তার মেয়ে ও সহকারী শিক্ষক লাভলী দত্ত জানান, প্রিয়াংকা মূল কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য মানসিক চাপ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অপেক্ষা করছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের বক্তব্য থেকে জানা যায়, প্রিয়াংকা দত্ত লাবণীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শোকজ নোটিশ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে অফিস আদেশ অমান্যের কারণে শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটছে এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফটকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক অফিসের কাজে বাইরে থাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষকের উপস্থিতি কমছে। এছাড়া মা ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকার বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা এসেছে, এক বছরের অধিককাল সংযুক্তিতে থাকা শিক্ষকগণের সংযুক্তি বাতিল করে তাদের মূল কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু প্রিয়াংকা দত্ত লাবনী এই নির্দেশও মানছেন না। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে।
শিক্ষক সংক্রান্ত এই অনিয়ম এবং অফিস আদেশের প্রতি অবজ্ঞার কারণে শ্রীমঙ্গলের শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে জরুরি হয়ে উঠেছে।