প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১১:১৮
পৃথিবীতে আল্লাহর রাসূল (সা.) যেভাবে জীবনযাপন করেছেন, সেই পদ্ধতিকেই বলা হয় সুন্নাত। একজন মুসলমানের জীবনে সুন্নাহ অনুসরণ শুধু ইবাদত নয়, বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সবচেয়ে সুন্দর ও সহজতম পথ। হাদিসে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহকে ভালোবাসে, সে যেন আমাকেই ভালোবাসল। আর যে আমাকেই ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।” (তিরমিজি)
আমরা অনেক সময় মনে করি, কেবল নামাজ-রোজা বা হজ-জাকাতের মতো বড় বড় আমলই ইসলামি জীবনের মূলভিত্তি। কিন্তু বাস্তবে রাসূল (সা.) আমাদের যাপিত জীবনের প্রতিটি কাজে এমন কিছু দোয়া, কাজ ও অভ্যাস রেখে গেছেন যা ছোট মনে হলেও আখিরাতে অশেষ সাওয়াবের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যেমন, ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়া, ডান দিকে ঘুমানো, খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা, ডান হাত দিয়ে খাওয়া—এসবই সুন্নাত।
এমনকি হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়, এটিও সদকার সাওয়াব পাবে।” অর্থাৎ, ভালোবাসা দিয়েও যদি কেউ সুন্নাত অনুসরণ করে, তাও তার জন্য ইবাদত হয়ে যায়। এমনকি টয়লেটে ঢোকার দোয়া থেকে শুরু করে বৃষ্টির সময়ের দোয়া—এসব ছোট ছোট কাজেও আল্লাহর রহমত ও বরকত নিহিত।
সুন্নাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নিয়ত। রাসূল (সা.) বলেন, “সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।” অর্থাৎ, কোনো ভালো কাজের আগে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করি, তবে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে—even যদি সেটা হয় পরিবারের জন্য রান্না করা বা রাস্তায় কাঁটা সরানো। নিয়ত শুদ্ধ থাকলে ছোট কাজও বড় সাওয়াবের দরজায় রূপ নেয়।
বর্তমান সময়ে আমরা অনেকে বড় বড় ওয়াজ শুনি, ইসলামি পোস্ট পড়ি—কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে সুন্নাত অনুসরণের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অথচ রাসূলের সুন্নাহই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ পথ। যেসব পরিবারে বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই সুন্নাত শিক্ষা দেওয়া হয়, তারা ভবিষ্যতে নৈতিকভাবে শক্তিশালী ও আল্লাহভীরু হয়ে বেড়ে ওঠে।
রাসূল (সা.) নিজ জীবনে নম্রতা, দয়া, পরিচ্ছন্নতা, সময়নিষ্ঠতা এবং মানবিকতা—এই পাঁচটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি কখনো কাউকে কষ্ট দেননি, বরং মুশরিকদের সঙ্গেও ভালো আচরণ করতেন। এটি তাঁর সুন্নাতের বড় দৃষ্টান্ত। আমরা যদি এই গুণগুলো জীবনচর্চায় আনতে পারি, তবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেক সহজ হবে।
অধিকাংশ হাদিস শরিফে সুন্নাতের প্রতি অবহেলা করাকে গোনাহ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার উম্মত নয়।” (বুখারি ও মুসলিম)। তাই সুন্নাহ পালনে গাফিলতা শুধু ইবাদত নয়, আমাদের পরিচিতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের উচিত, ছোট ছোট সুন্নাহ জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিদিন অন্তত একটি নতুন সুন্নাত শেখা ও তা জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা উচিত। এতে আমাদের জীবন যেমন সুন্দর ও পূর্ণতা পাবে, তেমনি আখিরাতে অসংখ্য সাওয়াবের ফয়জ হাসিল হবে।