প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ৯:২৪
মানুষের জীবনে সংকট আসবেই, বিপদ আসবেই। সেই বিপদের সময় মানুষ যার শরণাপন্ন হয়, তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। দোয়া হচ্ছে বান্দার অস্ত্র—যা দিয়ে সে পৃথিবীর এবং আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ লাভ করতে পারে। কিন্তু সব দোয়া কি কবুল হয়? অনেকেই বলেন, দোয়া তো করেছি, কিন্তু ফল পাইনি। আসলে দোয়ার কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত ও আদব রয়েছে, যেগুলো পূরণ না হলে দোয়ার দরজাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রথমত, দোয়া কবুলের জন্য হালাল রিজিক ভক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন একজন মানুষ আছেন, যিনি হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন, অথচ তার খাবার হারাম, পোশাক হারাম, উপার্জন হারাম—তাহলে কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে? (সহিহ মুসলিম)। তাই দোয়া কবুলে হালাল উপার্জন অপরিহার্য।
দ্বিতীয়ত, দোয়ার সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকা জরুরি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দোয়া করো এ বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করবেন। জেনে রেখো, আল্লাহ এমন কারও দোয়া কবুল করেন না, যার অন্তর অমনোযোগী ও উদাসীন।’ (তিরমিজি)
তৃতীয়ত, দোয়া কবুলের কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, যেমন শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সময়, আজানের পর, রমজান মাসে ইফতারের সময়, জুমার দিনে বিশেষ মুহূর্তে, মুসিবতে আক্রান্ত অবস্থায় ও সেজদার সময় ইত্যাদি। এই সময়গুলোতে দোয়া করলে তা অধিক কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চতুর্থত, দোয়ার মধ্যে বিনয়-নম্রতা থাকা চাই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবকে নম্রভাবে ও গোপনে ডাকো।’ (সূরা আরাফ: ৫৫)। দোয়ার সময় অহংকার, অবহেলা বা জোরাজুরির মতো আচরণ দোয়ার গ্রহণযোগ্যতাকে ব্যাহত করতে পারে।
পঞ্চমত, দোয়া যেন কোনো পাপের জন্য না হয়, যেমন কারো ক্ষতি কামনা, হারাম কিছু পাওয়ার আশা, বা আত্মহত্যার আকাঙ্ক্ষা। এসব দোয়া আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং দোয়া হোক কল্যাণ, হেদায়েত ও নাজাতের জন্য।
ষষ্ঠত, ধৈর্য ও দৃঢ়তা থাকা দরকার। অনেক সময় আমরা মনে করি, আল্লাহ শুনছেন না, অথচ তিনি শুনছেন, কিন্তু হয়তো আমাদের জন্য অন্য কিছু ভালো রেখেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তাড়াহুড়া না করে এই বলে দোয়া বন্ধ না করে যে, “আমি দোয়া করেছি, কিন্তু কবুল হয়নি।”’ (বুখারি)
সপ্তমত, নিজের জন্য যেমন দোয়া করবো, তেমনি অন্যদের জন্যও দোয়া করবো। হাদিসে এসেছে, কোনো ব্যক্তি যখন অন্য ভাইয়ের জন্য গোপনে দোয়া করে, তখন আল্লাহ একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন, যিনি বলেন, “তোমার জন্যও যেন এর চেয়ে উত্তম হয়।” (মুসলিম)
অষ্টমত, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের বিভিন্ন দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর শেখানো দোয়াগুলো আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করলে দোয়া যেমন কবুল হয়, তেমনি আল্লাহর রহমতও লাভ হয়। কাজেই আমাদের উচিত দোয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সঠিকভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।