প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৮
ইসলামে আমল বা কর্ম যত গুরুত্বপূর্ণ, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই আমলের নিয়ত। হাদীসে এসেছে—“নিয়ত ছাড়া কোনো আমল গ্রহণযোগ্য নয়” (সহীহ বুখারী)। অর্থাৎ আমাদের প্রতিটি ইবাদত, দুনিয়াবি কাজ এমনকি সাধারণ কথাবার্তাও যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তাতেও সওয়াব রয়েছে। তাই মুসলমানের জীবনে সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হলো নিজের নিয়তকে ঠিক করা।
আমরা অনেকে সালাত পড়ি, রোজা রাখি, দান-খয়রাত করি; কিন্তু নিয়ত থাকে লোক দেখানো, সামাজিক মর্যাদা অর্জনের জন্য বা পারিবারিক চাপে। তখন সেই ইবাদত আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে লোক লোক দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে, সে শিরকে লিপ্ত হয়েছে।” (নাসাঈ)। অর্থাৎ নিয়তের ভুলে ছোট ছোট আমল থেকেও মানুষ মারাত্মক গুনাহগার হয়ে পড়তে পারে।
আল্লাহতায়ালা কুরআনে বলেন, “তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দাও—আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু—সবই একমাত্র আল্লাহর জন্য” (সূরা আন’আম, আয়াত ১৬২)। এই আয়াত আমাদের জানিয়ে দেয়—পুরো জীবনটাই যেন হয় আল্লাহর রেজার উদ্দেশ্যে। আমরা চাকরি করি, ব্যবসা করি, পরিবার চালাই—সবই যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়, তা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হবে।
নিয়তের বিশুদ্ধতার কারণে ছোট্ট একটি কাজও মহামূল্যবান হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “এক ব্যক্তি রাস্তা থেকে একটি কাঁটা সরিয়ে দিয়েছিল, এতে আল্লাহ খুশি হয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন।” (সহীহ মুসলিম)। যদি সে এটা মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যে করে থাকে, তাহলেই সেই কাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।
নিয়ত ঠিক রাখার জন্য দরকার নিয়মিত আত্মবিশ্লেষণ ও তওবা। প্রতিদিন নিজের মনকে প্রশ্ন করা দরকার—আজকের কাজগুলো আমি কার জন্য করলাম? এতে কি আল্লাহ খুশি হবেন? নিজেকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করিয়ে ভাবা দরকার—আমি যা করছি, তা কি পরকালীন সফলতার জন্য? যদি কোনো কাজের পিছনে রিয়া বা দুনিয়াবি উদ্দেশ্য থাকে, তবে এখনই তা সংশোধন করা উচিত।
আমল গোপন রাখাও নিয়ত বিশুদ্ধ রাখার অন্যতম উপায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সাত প্রকার লোক কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে, তার মধ্যে একজন হলো—যিনি গোপনে দান করেন, এমনকি তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী দান করছে।” (সহীহ বুখারী)। গোপনে আমল করলে তা লোক দেখানো থেকে রক্ষা পায়।
তবে নিয়ত বিশুদ্ধ রাখার চেষ্টা করলেই যথেষ্ট নয়, তা নিয়মিত পরিশোধিত করাও জরুরি। কারণ শয়তান সবসময় মানুষের নিয়তকে আক্রমণ করে। আমাদের উচিত, যেকোনো ভালো কাজের শুরুতে এবং মাঝখানেও মনে মনে নিয়তকে সংশোধন করা—“হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই এটা করছি।” তবেই আমরা ইখলাস বা একনিষ্ঠতার পথে থাকতে পারব।
সত্যিকারের মু’মিন কখনো কাজের বাহ্যিক ফল দেখে নয়, বরং কাজটি আল্লাহর কাছে কবুল হবে কি না—সে আশায় থাকে। নিয়ত বিশুদ্ধ হলে আল্লাহ ছোট্ট একটি কাজ থেকেও বড় পুরস্কার দেন। তাই প্রতিদিনের জীবনে আমাদের মূল মনোযোগ হওয়া উচিত, ‘আমি যেটা করছি সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কি না’। এই একটাই প্রশ্ন বদলে দিতে পারে পুরো জীবন।