প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৪
মানুষের অন্তরের ভেতরেই বাস করে তার সবচেয়ে বড় শত্রু—নফস। এই নফসই মানুষকে গোনাহের দিকে ঠেলে দেয়, শয়তানের ফাঁদে ফেলে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, নিজের নফসকে জব্দ করাই প্রকৃত মুত্তাকির পরিচয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করল, সে-ই সফল হল।” (সূরা আশ-শামস: ৯)।
আমাদের নফস তিন প্রকার—নফসে আম্মারা (মন্দ কাজের আদেশদাতা), নফসে লাওয়ামা (পশ্চাতাপবোধক নফস), আর নফসে মুতমাইন্না (সন্তুষ্ট আত্মা)। অধিকাংশ মানুষ জীবনের বেশিরভাগ সময় নফসে আম্মারার প্রভাবেই চলে। হাদীসে এসেছে, “তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু তোমার নিজের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।” এই কথাটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনচর্চার গভীর এক বাস্তবতা।
নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা কোনো বাহ্যিক অস্ত্রের লড়াই নয়; এটি একটি আত্মিক সংগ্রাম। মহানবী (সা.) একবার যুদ্ধ শেষে বলেছিলেন, “আমরা ছোট জিহাদ থেকে ফিরে এলাম, এখন বড় জিহাদ শুরু।” সাহাবারা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, “এটি হচ্ছে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ।” এই হাদীস আমাদের বুঝিয়ে দেয় আত্মনিয়ন্ত্রণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আধুনিক জীবনে আমাদের নফসকে উস্কে দেয় অসংখ্য বিষয়—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাড়তি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা, বিলাসিতা, হিংসা, অহংকার, কামনা। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ না করলে অন্তর পরিশুদ্ধ হয় না, আর অন্তর পরিশুদ্ধ না হলে ঈমানও স্থায়ী হয় না।
নফসের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জনের জন্য দরকার আত্মসমালোচনা, ইবাদতে গভীরতা এবং আল্লাহর ভয়। দৈনিক নিজের কাজগুলো পর্যালোচনা করা, ভুল হলে তাওবা করা, বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া—এসবই আত্মনিয়ন্ত্রণের পথ। রমজান মাসে যেমন আমরা রোজা রেখে নফসকে সংযত রাখি, ঠিক তেমনি পুরো বছর ধরে নফসের লাগাম টেনে ধরাই মুমিনের কাজ।
তাসাউফ ও তরীকতের ধারায় নফস পরিশুদ্ধির জন্য আল্লাহর যিকির, মুরাকাবা, ও মুজাহাদা শেখানো হয়। এগুলো শুধুই আধ্যাত্মিক সাধনা নয়; বরং এগুলো মনের ওপর লাগাম পরানোর উপায়। অনেক সাহাবা ও বুযুর্গ আলেমেরা দিনের শেষে নিজেদের বলতেন, “আজ আমি নিজের সাথে কী করলাম?”
আজকের এই বৈচিত্র্যপূর্ণ যুগে যখন মানুষ নিজের মধ্যকার শত্রুকে চেনে না, তখন সত্যিকারের ইমানদার হওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই নিজেদের সন্তানদেরও ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে—তোমার আসল প্রতিপক্ষ বাইরের কেউ নয়, বরং তোমার নিজের ভেতরের লোভ, অহংকার ও কুপ্রবৃত্তি।
পরিশেষে, আল্লাহর কাছে দোয়া করি—তিনি যেন আমাদের নফসের খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করেন, অন্তর পরিশুদ্ধ করেন এবং আমাদের সঠিক পথে অটল রাখেন। আমিন।