প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৮
গাজায় চলমান মানবিক সংকট ও সামরিক আগ্রাসনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলকে হামলা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “ফিনিশ দ্য জব, দে ওয়ান্ট টু ডাই।” তার এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক আলোচনার ধারায় নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দিয়েছেন, যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই তিনি বলেছিলেন, হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, হামাস আলোচনার যোগ্য নয় এবং তারা ‘মরতে চায়’। এই অবস্থান থেকে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তার অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে।
গাজায় চলমান সংকটকে জাতিসংঘ ‘জীবন্ত লাশে পরিণত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করছে। সেখানে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা ঘাটতিতে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। তবুও ট্রাম্পের বক্তব্য ইসরাইলের ২১ মাসব্যাপী সামরিক অভিযানকে সরাসরি সমর্থন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
একইসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি কাতারের দোহায় চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি হামাসকে দোষারোপ করে বলেছেন, তারা আন্তরিক নয় এবং কোনো সমন্বয় ছাড়াই আলোচনা করছে।
এই হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তনে কাতার ও মিসরের কূটনৈতিক মহলে হতবাক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই দুই দেশ মূলত যুদ্ধবিরতির প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। দোহায় যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, “এটা যেন এক প্রকার ভূমিকম্প, আমরা এখন আফটারশক সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
যদিও মিসর ও কাতার নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। ইসরাইলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়েছেন, আলোচনার দরজা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে নেতানিয়াহুর প্রতি অসন্তোষের ইঙ্গিতও দেন। যদিও বিস্তারিত বলেননি, তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাম্প্রতিক কথোপকথনকে তিনি ‘হতাশাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
একদিকে ট্রাম্পের ‘শেষ করে দাও’ বার্তা, অন্যদিকে নেতানিয়াহুর ঘোষণায় দেখা যাচ্ছে, ইসরাইল ‘বিকল্প কৌশল’ নিয়ে ভাবছে—যার লক্ষ্য হামাসের শাসন শেষ করা এবং জিম্মিদের মুক্তি।
এই অবস্থায় গাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়ে গেলেও, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কৌশল অনেকটাই এখন সেনাবাহিনীর গতি ও শক্তির উপর নির্ভর করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য হয়তো হামাসকে চাপ দেওয়ার কৌশল, আবার এটাও হতে পারে যে শান্তিপ্রক্রিয়া বাস্তবেই ভেঙে পড়েছে। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে এখন চাপা পড়ে আছে মানবতা, কূটনীতি এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য।