প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৯:২১
বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। সংস্থাটি ২১ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেছে, দেশে রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিবর্তনের মাঝেও ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা রয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারা গঠিত হয় এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই সরকার ইতোমধ্যেই একাধিক সাংবিধানিক ও নীতিগত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, যা দেশব্যাপী আলোচিত হচ্ছে।
ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কমিশনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়, মে মাসে ইউএসসিআইআরএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে এবং অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে। তিনি তার সরকারের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করলেও মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের বিশ্বাস পালনে নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকলেও এখনো ১৯৫এ ধারার মতো বিতর্কিত ধর্ম অবমাননার আইন কার্যকর রয়েছে। পাশাপাশি ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন বক্তব্য বা কনটেন্টকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড।
কমিশন মনে করে, সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব ধর্মীয় পরিবেশে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি পরিবর্তন করে ‘বহুত্ববাদ’ যুক্ত করার প্রস্তাব বিশেষভাবে নজর কেড়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি স্পষ্টভাবে আপত্তি জানিয়ে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাক্যটি সংবিধানে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা সমতুল্য বাংলা শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে তাদের প্রতিনিধিত্বও সীমিত রাখা হয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনের মাধ্যমে বোঝা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় পরিবেশের দিকটিও আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রয়েছে।