লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আক্রমণে ২২ জন লেবানিজ নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন লেবানিজ সেনাও রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ইসরাইলি সেনারা এই আক্রমণ চালিয়েছে যখন নিহতরা তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। যদিও রোববারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইলি সেনাদের লেবানন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, তারা এখনও ওই অঞ্চল ছেড়ে যায়নি। ইসরাইলের দাবি, হিজবুল্লাহর উপস্থিতি এবং লেবানিজ সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় মোতায়েন না হওয়ার কারণেই তারা এখনও সেখানে অবস্থান করছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে ইসরাইলি সেনাদের হামলায় আহত হয়েছে আরও ১২৪ জন মানুষ। এ আক্রমণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লেবাননের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। তাদের দাবি, নিরীহ মানুষদের হত্যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
হোয়াইট হাউস থেকে রোববার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তি ২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইলকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও তারা এখনও তা করেনি। এর ফলে লেবানিজদের জীবনে নতুন করে সংঘাতের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে ইসরাইলি পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হিজবুল্লাহর কার্যক্রম এখনও দক্ষিণ লেবাননে সক্রিয় রয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে তাদের সেনা প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র আরও বলেছেন, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলকে হিজবুল্লাহমুক্ত করার বিষয়টি চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল, যা এখনও পূরণ হয়নি।
লেবাননের জনগণ ও সরকার এই অবস্থার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা ইসরাইলের এই পদক্ষেপকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। লেবানিজ সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উত্থাপন করবেন এবং ন্যায়বিচারের জন্য জোর দাবি জানাবেন।
অপরদিকে, লেবাননের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ইসরাইলের এই ধরনের কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে আরও দুর্বল করে তুলছে। তাদের মতে, এই ধরনের আক্রমণ কেবল সংঘাতকেই দীর্ঘায়িত করবে।
লেবাননের সাধারণ জনগণের মধ্যে এই ঘটনাকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক শহর এখন কার্যত জনশূন্য হয়ে গেছে। অনেকেই জীবন বাঁচাতে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরাইলি সেনারা এখনও ওই অঞ্চলে টহল দিচ্ছে, যা নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন লেবাননের পরিস্থিতির দিকে। বিশ্ব নেতারা ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে চুক্তির শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।