শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার মধ্যে নতুন বিরোধের সূচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ২৭শে জানুয়ারী ২০২৫ ১২:১৬ অপরাহ্ন
শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার মধ্যে নতুন বিরোধের সূচনা

যুক্তরাষ্ট্র এবং কলম্বিয়ার মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনা নতুন শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আরো তীব্র হয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, কলম্বিয়া থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পাল্টা হিসেবে, কলম্বিয়া একই পরিমাণ শুল্ক যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। তবে, ট্রাম্প আরও বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এই শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।


এছাড়া, কলম্বিয়ার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা, কাস্টমস পরীক্ষায় কঠোরতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপের কথাও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকে দুইটি বিমান ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন বলছে, কলম্বিয়া সরকারের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।


কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে আচরণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার সরকার অভিবাসী বহনকারী বিমান গ্রহণ করবে না। পেট্রো তার সামাজিক মিডিয়া এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, “অভিবাসী অপরাধী নয়, তাদের সম্মানজনক আচরণের প্রাপ্য।” তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।


উল্লেখযোগ্যভাবে, কলম্বিয়া ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৪৭৫টি অভিবাসী বহনকারী বিমান গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে, কলম্বিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।


এই বাণিজ্যিক উত্তেজনা এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি কেবল দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককেই প্রভাবিত করবে না, বরং এটি দক্ষিণ আমেরিকার রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।


এই সাম্প্রতিক উত্তেজনা শুধু বাণিজ্যিকভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবেও তীব্র হয়েছে। মার্কিন সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও জটিল হতে পারে। বিশেষত, যেভাবে ট্রাম্প প্রশাসন কলম্বিয়া সরকারের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।


এদিকে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, একদিকে যেখানে ট্রাম্প প্রশাসন কলম্বিয়া থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করছে, অন্যদিকে কলম্বিয়া সরকারও পাল্টা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এছাড়াও, অভিবাসন নীতি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধের কারণে এই উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে।


এখন দেখার বিষয় হলো, এই পরিস্থিতি কিভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে পারে। দুই দেশের সরকার যদি একে অপরের প্রতি আরও শত্রুতামূলক মনোভাব না নিয়ে সমঝোতার পথ অনুসরণ করে, তবে হয়তো এই উত্তেজনা সাময়িকভাবে প্রশমিত হতে পারে। তবে, আগামী দিনগুলিতে এই উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে তাদের সামগ্রিক নীতির ওপর।


এরই মধ্যে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং কলম্বিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্ব মিডিয়াতে বড় ধরনের আলোচনা সৃষ্টি করেছে। আগামী সপ্তাহগুলিতে এই উত্তেজনা আরো বাড়লে, তা আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।