প্রকাশ: ৫ মে ২০২৫, ১১:৫
মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী অস্ত্র। এটি শুধু একটি ইবাদতই নয়, বরং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “দোয়া ইবাদতের মজ্জা।” (তিরমিজি)। দোয়া আল্লাহর প্রতি আস্থা, নির্ভরতা ও বিনয় প্রকাশের একটি রূপ। একজন মুমিন যখন দোয়া করে, তখন সে আল্লাহর দয়ার প্রত্যাশায় নিজেকে সঁপে দেয়। এই আত্মসমর্পণ একজন বান্দার শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর একটি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমাদের প্রতিপালক বলেন, আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সূরা মু’মিন, আয়াত ৬০)। এই আয়াত আমাদের দোয়ার প্রতি আল্লাহর সদয় প্রতিক্রিয়া বোঝায়। দোয়া আমাদের মনকে শান্ত করে, হৃদয়কে প্রশান্তি দেয় এবং হতাশা দূর করে আশার আলো জ্বেলে তোলে। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ও ঈমানকে দৃঢ় করে।
দোয়া করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বা স্থান বাধ্যতামূলক নয়, তবে কিছু সময় বিশেষভাবে দোয়া কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে, যেমন তাহাজ্জুদের সময়, জুমার দিনের শেষ অংশ, রোজাদারের ইফতারের সময় ইত্যাদি। এছাড়াও দোয়া করার সময় খুশু ও খুজু থাকা, দোয়ার আগে ও পরে দরুদ পাঠ করা এবং নিরবিচারে আত্মনিবেদন করলে দোয়া অধিক কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দোয়া সবসময়েই আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, যদিও তা আমরা তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারি না। কোনো কোনো সময় দোয়ার ফল সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়, কোনো সময় তা বিলম্বিত হয় বা অন্যভাবে কবুল হয়। হাদিসে এসেছে, “আল্লাহ কোনো বান্দার দোয়া কবুল করেন তিনভাবে—তাৎক্ষণিক কবুল করে দেন, মসিবত থেকে রক্ষা করেন অথবা আখিরাতে এর উত্তম প্রতিদান দেন।” (মুসনাদে আহমদ)।
আমাদের উচিত প্রতিদিন দোয়া করা, ছোট-বড় সব কাজে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং তাঁর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা। শুধু দোয়া করেই নয়, দোয়ার পাশাপাশি আমলের দিকেও মনোযোগী হওয়া দরকার, যেন দোয়া বাস্তবতা লাভ করতে পারে। মনে রাখা দরকার, দোয়া আমাদের অন্তরের চাওয়া, যা শুধু মুখে উচ্চারণ করলেই নয়, অন্তর থেকেও অনুভব করতে হয়।
আজকের দিনে আমাদের উচিত নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজ ও গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা। পৃথিবীতে শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠায় দোয়া হতে পারে আমাদের শক্তিশালী এক অস্ত্র। আল্লাহ যেন আমাদের দোয়া কবুল করেন এবং আমাদের অন্তরকে সবসময় তাঁর প্রতি বিনম্র ও একনিষ্ঠ রাখেন—এই প্রার্থনা করি।