জিলকদ মাস, আরবি চান্দ্রবছরের একাদশ মাস, মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সময়। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) মধ্যে দ্বিতীয় মাস এবং হারাম বা নিষিদ্ধ চার মাসের তৃতীয় মাস। এই মাসটি বিশেষভাবে আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই মাসের মধ্যে মুসলমানরা বিশ্রাম নিতে পারে, যা পরবর্তী মাসগুলির জন্য প্রস্তুতির সময় হিসেবে কাজ করে।
যদিও জিলকদ মাসের নিজস্ব কোনো নির্ধারিত ফরজ ইবাদত নেই, তবুও এটি বিশ্রামের মাস হিসেবে পরিচিত। রমজান, শাওয়াল, রজব, শাবান—এই চারটি মাস মুসলমানদের জন্য ইবাদতের অত্যন্ত ব্যস্ত সময়। এর পর জিলকদ মাস আসে, যা ইবাদতের জন্য প্রস্তুতির সময়। এই মাসে মুসলমানরা বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে পারে এবং পরবর্তী মাসগুলির জন্য শক্তি সংগ্রহের সুযোগ পায়।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, "যখনই অবসর পাও, দাঁড়িয়ে যাও, তোমার রবের ইবাদতে মশগুল হও" (সুরা: ইনশিরাহ, আয়াত: ৭-৮)। এটি পরিস্কারভাবে নির্দেশ দেয় যে, জীবনটাকে ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য ব্যয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, জিলকদ মাসের পরে যে দুইটি মাস, জিলহজ ও মহররম, ইবাদতে পূর্ণ, সেই সময়ের প্রস্তুতির জন্য জিলকদ মাস অন্যতম।
হাদিসে বলা হয়েছে যে, পরকালে নেককার মুসলমানদের কোনো আক্ষেপ থাকবে না, তবে একটাই বিষয় তাদের আক্ষেপের কারণ হবে—"যে সময় তারা ইবাদত থেকে মুক্ত ছিল, সেই সময়টা কেন নেক আমলে ব্যয় করা হয়নি?" (তিরমিজি)। এটি আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে পরিপূর্ণ হতে হবে।
এই মাসটি সেই সময়, যখন মুসলমানরা নিজের আত্মিক ও শারীরিক শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারে। জিলকদ মাসের আগে, রমজানসহ অন্যান্য মাসে কঠোর ইবাদত করার পর, এই মাসে বিশ্রামের সুযোগ মেলে। আল্লাহ তাআলা এই মাসটি ইবাদতের জন্য প্রস্তুতির সময় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, যেন মুসলমানরা পরবর্তী মাসগুলির জন্য আরও বেশি পরিশ্রমী হতে পারে।
এছাড়া, জিলকদ মাসের কিছু নির্দিষ্ট আমলও রয়েছে, যা মুসলমানরা পালন করতে পারে। যেমন, জিলকদ মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখে নফল রোজা রাখা অত্যন্ত সুফলদায়ক। এছাড়া, চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের সুন্নত রোজা পালন করা, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নতে নববি রোজা পালন করা, এবং প্রতি শুক্রবার নফল রোজা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরও, সলাতুত তাসবিহ, তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউওয়াবিন নামাজগুলো নিয়মিত পড়া উচিত।