প্রকাশ: ৫ মে ২০২৫, ১১:১৩
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। হামলার পর থেকে সীমান্ত জুড়ে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি, সেনা মোতায়েন ও সামরিক মহড়ার ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ গত ৪ মে রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে টানা ১১ রাত ধরে দুই দেশের সেনাবাহিনী সীমান্তে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। কাশ্মীরের পরিস্থিতি দিন দিন আরও অস্থির হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবনি ও আখনুর সেক্টরে ভারতীয় সেনাদের চেকপোস্ট লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনারা। জবাবে ভারতীয় সেনারাও পাল্টা হামলা চালায়। এখনো পর্যন্ত হতাহতের কোনও খবর পাওয়া না গেলেও এই সংঘর্ষের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে যে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়, তা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারত এই হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে দেয়। পাশাপাশি দেশটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেয়।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিত এবং ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করে। দুই দেশই পরস্পরের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে এবং সীমান্তবর্তী জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সীমান্তে যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। অপরদিকে পাকিস্তানও সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে এবং তাদের সেনাপ্রধান কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে সংঘর্ষের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
সীমান্তে বাড়তি সেনা মোতায়েন, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও নিয়মিত সামরিক মহড়ার মাধ্যমে দুই দেশই নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে। শনিবার পাকিস্তান ‘আবদালি’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে, যা সিন্ধু মহড়ার অংশ হিসেবে সম্পন্ন হয়। এর রেঞ্জ ৪৫০ কিলোমিটার বলে জানানো হয়।
এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্নভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সীমান্তের এই উত্তেজনা যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে, এমন আশঙ্কা এখন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।