ইসলামী জীবনব্যবস্থায় শুক্রবার শুধু নামাজের দিন নয়, এটি মুসলমানদের ঐক্য ও সমাজিক বন্ধনের অন্যতম প্রতীক। এই দিনে মুসলমানেরা একত্র হয়ে জুমার নামাজ আদায় করে, খুতবা শোনে, পারস্পরিক অভিবাদন বিনিময় করে এবং সমাজের দুঃস্থদের দিকে দৃষ্টি দেয়, যা ইসলামের সামগ্রিক মানবিকতার প্রতিফলন ঘটায়।
কোরআন শরীফে বলা হয়েছে, জুমার দিন নামাজের আহ্বান শুনলে দুনিয়াবি কাজ বন্ধ করে আল্লাহর স্মরণে চলে যেতে হবে। এই আহ্বান শুধু ইবাদতের নয়, বরং এটি মুসলমানদের মাঝে সমতা ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার এক প্রেরণা। কারণ, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই একই কাতারে দাঁড়ায় এই দিনে।
হাদীসে রাসুল (সা.) বলেছেন, “জুমার দিন হচ্ছে সকল দিনের সেরা।” তিনি আরও বলেন, এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে বান্দা যদি দোয়া করে, আল্লাহ তা কবুল করেন। এই সময়টি সন্ধ্যার একটু আগে অথবা খুতবার সময় হতে পারে বলে অনেক আলেম মত প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো খুতবা। এই খুতবা শুধু ধর্মীয় উপদেশ নয়, বরং এটি সমাজে চলমান অন্যায়, অবিচার ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে সঠিক পথনির্দেশনার কাজ করে। খতিবরা সমাজ সচেতনতায় এই সময়কে ব্যবহার করেন, যা সমাজ সংস্কারে বড় ভূমিকা রাখে।
এই দিনে সুরা কাহফ তেলাওয়াত করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে এই সূরাটি পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য দুই জুমার মাঝে এক আলো সৃষ্টি করে দেন। এটি আত্মিক শুদ্ধির পাশাপাশি চিন্তা-চেতনায় আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে।
জুমার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সামাজিক সহমর্মিতা। এই দিনে দান-সদকা করা, আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নেওয়া এবং গরিবদের পাশে দাঁড়ানোকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বড় মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শুধু নামাজ পড়েই জুমার ফজিলত শেষ হয় না। বরং এই দিনটি আমাদের জীবনযাত্রায় ইসলামি মূল্যবোধ বাস্তবায়নের উপলক্ষ হয়ে উঠতে পারে যদি আমরা এর গুরুত্ব অনুধাবন করি ও সে অনুযায়ী কাজ করি।