প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৩
ইসলাম ধর্মে কবরকে বলা হয় ‘বারযাখ’ — যা মৃত্যুর পর ও কিয়ামতের আগে এক অন্তর্বর্তীকালীন জগৎ। একজন মুমিনের জন্য এই কবরের জীবন শান্তির, আর একজন কাফেরের জন্য এটি শাস্তির। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, কবর হলো জান্নাতের বাগানসম একটি বাগান অথবা জাহান্নামের গর্তসম একটি গর্ত। কবরের এই জীবন সম্পর্কে জানা, আমাদের দুনিয়ার আচরণ ও আমল গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে।
মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করেন, ফেরেশতা তার রূহ কবজ করে নিয়ে যায় জান্নাতের সুগন্ধময় কস্তুরির কাপড়ে মুড়িয়ে। তার রূহকে নিয়ে যাওয়া হয় আল্লাহর দরবারে, যেখানে তাকে সম্মান দেখানো হয়। এরপর কবরস্থ করার সময়, আল্লাহর আদেশে তার রূহ কবরস্থ দেহে ফিরে আসে। তখন দুজন ফেরেশতা — মুনকির ও নাকির তাকে প্রশ্ন করেন: "তোমার রব কে?" "তোমার ধর্ম কী?" "তোমার নবী কে?" একজন সৎ ও ঈমানদার মুসলিম সহজেই উত্তর দিতে সক্ষম হন: "আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম, এবং আমার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।"
এই উত্তর শুনে কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হয় যতদূর চোখ যায়, জান্নাতের জানালা খুলে দেওয়া হয় এবং বলা হয়, ‘ঘুমাও যেভাবে বর গৃহে ঘুমায়।’ তখন সে জান্নাতের সুবাস অনুভব করতে থাকে এবং তৃপ্তির ঘুমে আবিষ্ট হয়। একজন মুমিনের কবর জীবনের এই আনন্দঘন অবস্থা তার দুনিয়ার ইমান ও আমলের পুরস্কার।
অন্যদিকে, একজন অবিশ্বাসী বা পাপিষ্ঠ ব্যক্তির জন্য কবর হয় অত্যাচারের স্থান। তার রূহ তুলে নেওয়া হয় দুর্গন্ধময় কাপড়ে জড়িয়ে, আল্লাহর দরবারে তার সম্মান হয় না, বরং কবরেই তাকে শাস্তি দেওয়া শুরু হয়। ফেরেশতার প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারে না। তখন তার কবর চাপা পড়ে, সাপ-বিচ্ছুর আক্রমণে সে কষ্ট পায়, আর জাহান্নামের জানালা খুলে দেওয়া হয়, যাতে সে শাস্তির ঝলক দেখতে থাকে।
হাদীস থেকে জানা যায়, কবরের আজাব সত্য এবং এটি নিরবিচারে চলতে থাকে যতক্ষণ না কিয়ামত হয়। এমনকি কোনো মুমিন ব্যক্তি যদি কবরে কিছু ভুল করে থাকেন, তবুও আল্লাহর রহমতে তার জন্য মুক্তির দরজা খোলা থাকে। আর কিছু আমল রয়েছে যেগুলো কবরের আযাব থেকে মুক্তি দিতে পারে, যেমন— নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, সৎকর্ম, বিশেষ করে সূরা মুলক পাঠ করা।
এজন্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দারা দুনিয়াতে থেকেও কবরের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। তাঁরা জানেন, মৃত্যুই শেষ নয়, বরং এটি হলো নতুন জীবনের সূচনা। আমাদেরও উচিত নিয়মিত আত্মসমালোচনা করা, আমল সংশোধন করা এবং কবরের শান্তিময় জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
কবর নিয়ে সচেতন হওয়া, আমাদের জীবনে আল্লাহভীতি ও পরকালের চিন্তা জাগিয়ে তোলে। এই জাগরণই একজন মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং কবরের জীবনে প্রশান্তি এনে দেয়।