প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১১:১৪
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফ্রান্সসহ কিছু দেশে প্রকাশ্যে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটলেও এসব দেশের সরকার অভিব্যক্তির স্বাধীনতার কথা বলে এসব অপকর্মকে রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর ফলে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগছে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে কোরআন শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি আল্লাহর বাণী। এর প্রতি অবমাননা করা মানে সরাসরি আল্লাহর অবমাননা করা, যা কোনো মুসলমানের জন্য সহ্য করা কঠিন। হাদীসে এসেছে, ‘যে কোরআনের অবমাননা করে, সে কুফরির সীমা অতিক্রম করে’ (তিরমিযী)। এ অবস্থায় বিশ্ব মুসলিমদের প্রতি দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন ঘটনার বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণভাবে রুখে দাঁড়ানো।
বিশ্বজুড়ে মুসলিম স্কলার ও আলেমগণ এ ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এর পেছনে এক শ্রেণির ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী সক্রিয়। তারা মুসলিমদের উসকানি দিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম সমাজকে ধৈর্য, সহনশীলতা ও প্রজ্ঞার সাথে মোকাবিলা করতে হবে। সহিংসতা নয়, বরং কূটনৈতিক ও আইনগত পথেই এই অবমাননাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ইসলামী দেশগুলোর সরকারগুলোর উচিত জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে চাপ সৃষ্টি করা। পাশাপাশি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে এক কণ্ঠে কথা বলা জরুরি। কেননা বিভক্ত মুসলিম বিশ্বের কারণে ইসলামবিদ্বেষীরা বারবার এমন সুযোগ নিচ্ছে।
সাধারণ মুসলমানদেরও সচেতন থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগতাড়িত হয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো বা উগ্র প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত থাকতে হবে। ইসলামের সৌন্দর্য ও শান্তিপূর্ণ বার্তাকে তুলে ধরতে হবে সৃজনশীল উপায়ে, যেন দুনিয়া বুঝতে পারে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা কী।
একইসঙ্গে মুসলিম পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোরআনের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে হবে। যারা কোরআন ভালোবাসে, তারা কখনো চুপ থাকতে পারে না; তবে প্রতিবাদের ভাষা হওয়া উচিত শালীন, যুক্তিসঙ্গত এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে।
এই অবস্থায় ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর উচিত বিশৃঙ্খলা না ছড়িয়ে সুপরিকল্পিত প্রতিবাদ, গণস্বাক্ষর অভিযান, আন্তর্জাতিক পিটিশন ও মিডিয়াভিত্তিক সচেতনতামূলক প্রচার চালানো। কারণ, কোরআনের অপমান শুধু মুসলমানের নয়, বিশ্বমানবতার অপমান। এজন্য সকল বিবেকবান মানুষের উচিত এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআনের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে এর শিক্ষা ও হিকমত অনুসরণ করে চলার তাওফিক দিন। আমিন।