প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১১:১১
মৃত্যুর পরে মানবজীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়—এটি কবরজীবন। এই জগতের সঙ্গে পরকালীন জীবনের প্রথম সংযোগ ঘটে কবরেই। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আত্মাকে পৃথক করা হয় এবং তাকে রাখা হয় কবরের পরিবেশে। এই সময়েই শুরু হয় একা একা জবাবদিহির দীর্ঘতম রাত, যাকে বলা হয় ‘কবরের প্রথম রাত’।
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “কবর হল জান্নাতের বাগান অথবা জাহান্নামের গর্ত।” অর্থাৎ এই জায়গাটি মুমিনের জন্য হতে পারে শান্তির স্থান আবার কাফের বা পাপীর জন্য চরম শাস্তির জায়গা। মৃত্যুর পর আত্মা যখন কবরস্থ হয়, তখন ফেরেশতা মুনকার ও নাকির আসে প্রশ্ন করতে—তোমার প্রভু কে? তোমার দ্বীন কী? তোমার নবী কে ছিলেন?
যদি কেউ জীবিতাবস্থায় ঈমানদার হয়ে সৎ আমল করে থাকেন, তবে তার উত্তর সহজ হয় এবং তার কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হয়, জান্নাতের সুবাস পাওয়া যায় এবং সে ঘুমন্ত মানুষের মতো শান্তিতে থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঈমানহীন, দুশ্চরিত্র বা ভণ্ড ছিল, তার কবর সংকুচিত হয়ে যায়, তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হয় এবং জান্নাতের কোনো সুবাস সে পায় না।
কবরের শাস্তি কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে যদি না আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল (সা.) প্রতিদিন রাতে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করতেন। মুসলমানদের উচিত, মৃত্যুর পূর্বেই নিজের জীবন ও আমল পরিশুদ্ধ করা যাতে কবরের প্রথম রাত সহজ হয়।
মুমিনের জন্য কবরজীবন যেমন প্রশান্তিময় হতে পারে, ঠিক তেমনি অবিশ্বাসী বা গাফিল বান্দার জন্য কবর হয়ে উঠতে পারে কঠিন শাস্তির ঘর। তাই আমাদের উচিত, নামাজ কায়েম করা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং মৃত্যু ও পরকাল সম্পর্কে সচেতন থাকা।
কবরের বাস্তবতা স্মরণ করে মানুষ তার জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। এই চেতনা জাগ্রত হওয়া দরকার প্রতিটি মুসলমানের মধ্যে, যাতে সে কবরের প্রশ্নোত্তর ও শাস্তি থেকে মুক্ত থাকতে পারে। মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়া এবং পাপ থেকে দূরে থাকা একজন মুসলমানের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।
হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দাও এবং কবরের প্রথম রাতকে করুণা ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করো—আমিন।