প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১৬:১১
কুমিল্লার মুরাদনগরের বাহেরচর গ্রামে ঘটে যাওয়া বিবস্ত্র নির্যাতনের ঘটনায় একে একে বেরিয়ে আসছে পেছনের চিত্র, যেখানে রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি পরকীয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা সংঘটিত হলেও এর পেছনে ছিল রাজনৈতিক দাপট এবং পরিকল্পিত ফাঁদ।
ঘটনার রাতে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী ফজর আলী নামের এক যুবককে ঘরে ঢুকতে দিলে সুমন তার দলবল নিয়ে সেখানে হাজির হয়। পরে ফজর আলীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয় এবং ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হয়। এরপরে ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা নিয়ে এলাকায় নিন্দার ঝড় ওঠে।
ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া এই ঘটনাকে পরকীয়ার ফল বললেও ছাত্রলীগের নেতার নেতৃত্বে পরিকল্পিত ভিডিও ধারণ ও তা ছড়িয়ে দেওয়াকে তিনি নিন্দা জানান এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি করেন। ইউপি সদস্য আব্দুল করিম জানান, সুমনের নেতৃত্বে কমপক্ষে ১০-১২ জন এই ফাঁদে অংশ নেয় এবং তাদের লক্ষ্য ছিল সামাজিকভাবে হেয় করা ও ব্ল্যাকমেইল।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সুমন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত এবং পরকীয়ার মতো ঘটনাগুলোকে ‘ফিটিং কেস’ বানিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতো।
পুলিশ ইতিমধ্যেই সুমনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে। ওসি জাহিদুর রহমান জানান, ঘটনার সব দিক যাচাই করে তদন্ত চলছে এবং কারও রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব না দিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, এ ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, সবাইকে আইনের আওতায় আনতে মাঠে কাজ করছে তদন্ত টিম। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না এবং দ্রুততম সময়ে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হবে।
তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই এখনো মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না, যা এই ঘটনার সামাজিক চাপ ও ভয়ের দিকটি স্পষ্ট করে তোলে। এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।