প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২৫, ১২:১৮
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, গণহত্যা ও নিপীড়নের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়েছে। ১ জুলাই সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আর আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন অংশ নেন।
শুনানির এই কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। এর আগে ট্রাইব্যুনাল ১ জুলাই দিন নির্ধারণ করে দুই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয় এবং আসামিদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়, যা পরবর্তীতে যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়। শেখ হাসিনা ও কামাল নির্ধারিত সময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ চলবে বলে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে।
এই মামলার একমাত্র হাজির আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন এবং আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। শেখ হাসিনা ও কামালকে মামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে তদন্ত সংস্থা বলেছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৫টি অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল, এবং সেই ভিত্তিতেই নতুন করে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। এই মামলার অন্যতম ভিত্তি ১২ মে জমা পড়া তদন্ত প্রতিবেদন, যেখানে শেখ হাসিনাকে গণহত্যার মূল নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ছাড়াও আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন।
আলোচিত এই মামলায় প্রায় দেড় হাজার নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন নেতৃত্বকে দায়ী করা হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর ৪৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলায় তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল, যা বর্তমানে বিচার পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত আন্দোলনের পটভূমিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।
বিচারপ্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিলে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের অবসান ঘটবে বলে মনে করছেন মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা। তবে অভিযুক্তরা বিচারে অনুপস্থিত থাকায় এই প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে, তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।