প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১০:৫৭
ইসলামের পরিপূর্ণ বিশ্বাসের মধ্যে অন্যতম একটি বিশ্বাস হলো আখিরাত বা পরকাল। এই বিশ্বাসের মূল স্তম্ভ হলো কিয়ামত, যেদিন আল্লাহ তাআলা সব মৃত মানুষকে পুনরুত্থান করবেন এবং তাঁদের আমলের হিসাব নেওয়া হবে। হাদীস ও কোরআনের বর্ণনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কিয়ামতের দিন মানুষের দেহ আবার জীবিত করা হবে, এবং সবাই আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) একাধিক হাদীসে বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষকে এমন অবস্থায় তোলা হবে, যেমনটি তারা জন্মেছিল—অর্থাৎ নগ্ন, খালি পায়ে এবং অশিক্ষিত অবস্থায়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, ‘হে রাসূল! একে অপরকে দেখবে না?’ তিনি বলেন, ‘সেদিন এত ভয়াবহ হবে যে, কারো চিন্তা থাকবে না কে কেমন অবস্থায় আছে।’
মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “যে দিন আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেইভাবেই আমি তাদের পুনরুত্থিত করবো।”(সূরা আম্বিয়া: ১০৪)। এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে, কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান একটি অবিশ্বাস্য অলৌকিক ব্যাপার হলেও তা আল্লাহর জন্য সহজ। হাদীসে এসেছে, মানুষের প্রথমে পুনর্জীবিত হবে একটি হাড্ডি—যাকে আজবুজ-জানাব বলা হয়। এই হাড্ডি কখনো নষ্ট হয় না এবং সেখান থেকেই পুরো শরীর গড়ে তোলা হবে।
হাদীস অনুযায়ী, কিয়ামতের দিন মানুষের মুখমণ্ডল হবে তাদের আমলের প্রতিফলন। কেউ হাস্যোজ্জ্বল, কেউ ধূলায় ধূসরিত। কারো মুখ থেকে আলো বের হবে, কেউ থাকবে অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায়। সেই দিনই নির্ধারিত হবে কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে। মহানবী (সা.) আরও বলেন, “যে যেমন মৃত্যুবরণ করেছে, তাকে তেমন অবস্থাতেই তোলা হবে।” অর্থাৎ কেউ যদি শহীদ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদের রক্ত ও গন্ধ নিয়েই উঠবে। আবার কেউ যদি পাপের মধ্যে মারা যায়, সে সেই অবস্থাতেই উঠবে।
এই দিনটি হবে এত দীর্ঘ যে, হাদীসে এসেছে, এটি হবে ৫০ হাজার বছরের সমান। তীব্র গরম, পিপাসা ও ঘামের মধ্যে মানুষ আল্লাহর বিচার চেয়ে কাঁদতে থাকবে। সেই সময়ে একমাত্র মহানবী মুহাম্মদ (সা.) শাফায়াত করবেন তাঁর উম্মতের জন্য।
এইসব হাদীস ও কোরআনি বর্ণনা আমাদের মনে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে এবং দুনিয়ার জীবনে নেক আমল করার উৎসাহ জোগায়। যারা সত্যিকার অর্থে ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য হবে শান্তির দিন। আর যারা কুফরী ও গোনাহ করেছে, তাদের জন্য থাকবে শাস্তির দিন।
সুতরাং আমাদের উচিত, কিয়ামতের দিনের প্রস্তুতি নেওয়া এবং প্রতিটি দিনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী অতিবাহিত করা। কেননা, কিয়ামত আসবেই এবং সেই দিন কারো জন্য কোনো অজুহাত চলবে না।