রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি কাজই মুমিন মুসলমানের জন্য সর্বোত্তম শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। প্রিয় নবি যেসব কাজ করতেন, উম্মতে মুহাম্মাদিও সেসব কাজ করতে ভালোবাসেন। তিনি যেভাবে দোয়া করতেন, তাঁর উম্মতও সে দোয়া পড়তে ভালোবাসেন। আর এটিই হলো বিশ্বনবির প্রতি উম্মতের ভালোবাসা ও সুন্নাতের আমল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে যখন কোনো মৌসুমি বা নতুন ফল-ফলাদি আসতো তা যদি সাদকা হতো তবে তিনি তা অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। আর যদি হাদিয়া আসতো তা তিনি খেতেন এবং অন্যদেরকেও খেতে দিতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেঁজুর, শসা, তরমুজ খেতেন। এর সবই ছিল মদিনা ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলের মৌসুমী ফল। তিনি এসব ফল খেতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁচা খেজুরের সাথে শসা খেতেন।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, শামায়েলে তিরমিজি)
অন্য হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাজা খেজুরের সাথে তরমুজ খেতেন।’ (আবু দাউদ, বায়হাকি, শামায়েলে তিরমিজি)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায় যে, তিনি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খিরবিজ (তরমুজ) ও তাজা খেজুর একত্রে মিলিয়ে খেতে দেখেছেন।’ (শামায়েলে তিরমিজি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফল খেতেন তখন তিনি দোয়া করতেন। সাহাবায়ে কেরাম যখন তার কাছে মৌসুমের নতুন কোনো ফল নিয়ে আসতেন তখন তিনি বরকতের দোয়া করতেন আবার নিজের জন্য দোয়া করতেন। বিশ্বনবির এ দোয়া উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য সর্বোত্তম শিক্ষা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, সাহাবায়েকেরাম যখন কোনো নতুন ফল দেখতেন তখন তাঁরা তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেদমতে পেশ করতেন। আর তিনি তা গ্রহণ করে এ মর্মে দোয়া করতেন-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثِمَارِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا وَفِي مُدِّنَا ، اللَّهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ عَبْدُكَ وَخَلِيلُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَإِنِّي عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَإِنَّهُ دَعَاكَ لِمَكَّةَ ، وَإِنِّي أَدْعُوكَ لِلْمَدِينَةِ , بِمِثْلِ مَا دَعَاكَ بِهِ لِمَكَّةَ وَمِثْلِهِ مَعَهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি ছিমারিনা; ওয়া বারিকলানা ফি মাদিনাতিনা; ওয়া বারিকলানা ফি সায়িনা ওয়া ফি মুদ্দিনা; আল্লাহুম্মা ইন্না ইবরাহিমা আবদুকা ওয়া খালিলুকা ও নাবিয়্যুকা, ওয়া ইন্নি আবদুকা ওয়া নাবিয়্যুকা; ওয়া ইন্নাহু দাআকা লিমাক্কাহ, ওয়া ইন্নি আদউকা লিলমাদিনাতি বিমিছলি মাদাআকাবিহি লিমাক্কাতা ওয়া মিছলিহি মাআহু।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের ফলসমূহে আমাদের জন্য বরকত দাও; আমাদের শহরে আমাদের জন্য বরকত দাও; আমাদের জন্য আমাদের ‘সা’ এবং আমাদের ‘মুদ্দ’-এ (পরিমাপ যন্ত্রে) বরকত দাও।
হে আল্লাহ! নিশ্চয় (ইবরাহিম আলাইহিস সালাম) তোমার বান্দা, তোমার বন্ধু এবং তোমার নবি। আর আমিও (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার বান্দা ও তোমার নবি।
তিনি (ইবরাহিম আলাইহিস সালাম) তোমার কাছে মক্কার জন্য দোয়া করেছিলেন। আর আমি (মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ন্যায় মদিনার জন্য তোমার কাছে দোয়া করছি এবং এর সঙ্গে আরও সমপরিমাণ দোয়া করছি।’
এর বিশ্বনবি যাকে সর্বকনিষ্ঠ (ছোট) দেখতেন তাকে ডেকে সে ফল দিয়ে দিতেন।’ (মুসলিম, মুয়াত্তা মালেক, শামায়েলে তিরমিজি)
খেঁজুর, শসা ও তরমুজ ছিল মদিনা ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলের মৌসুমী ফল। প্রতি বছরই এসব নতুন ফল হতো আর তা হাদিয়া হিসেবে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতো। নতুন এসব ফল গ্রহণ করে বিশ্বনবি দোয়া হলো উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য শিক্ষা।
বর্তমান সময়ে মৌসুমি ফলসহ যেসব ফল মুমিন সুমলমানের সামনে আসবে, তা গ্রহণ করে, খাওয়ার সময় প্রিয় নবির শেখানো পদ্ধতিতে দোয়া করাও সাওয়াব কাজ ও সুন্নাতি আমল।
সুতরাং মুমিন মুসলমানও নতুন কোনো ফল দেখলে কিংবা খেলে এভাবে দোয়া করবেন-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثِمَارِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا ، وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا وَفِي مُدِّنَا ، اللَّهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ عَبْدُكَ وَخَلِيلُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَإِنَّهُ دَعَاكَ لِمَكَّةَ اللَّهُمَّ إِنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ ، وَإِنَّهُ دَعَاكَ لِلْمَدِينَةِ ، وَإِنِّي أَدْعُوكَ لِمَكَّةَ وَ لِلْمَدِينَةِ وَبِلَادُنَا بَنْغْلَادِيْش ، بِمِثْلِهِمَا مَا دَعَاكَ بِهِمَا لِمَكَّةَ و لِمَدِيْنَةِ وَمِثْلِهِ مَعَهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি ছিমারিনা; ওয়া বারিকলানা ফি মাদিনাতিনা; ওয়া বারিকলানা ফি সায়িনা ওয়া ফি মুদ্দিনা; আল্লাহুম্মা ইন্না ইবরাহিমা আবদুকা ওয়া খালিলুকা ও নাবিয়্যুকা, ওয়া ইন্নাহু দাআকা লিমাক্কাতা; আল্লাহুম্মা ইন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া নাবিয়ুকা; ওয়া ইন্নাহু দাআকা লিমাদিনাহ; ওয়া ইন্নি আদউকা লিমাক্কাতা ওয়া মাদিনাতি ওয়া বিলাদুনা বাংলাদেশ; বিমিছলিহিমা মা দাআকা বিহিমা লিমাক্কাতা ওয়া মাদিনাতি ও মিছলিহি মাআহু।’
অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের ফলসমূহে আমাদের জন্য বরকত দাও; আমাদের শহরে আমাদের জন্য বরকত দাও; আমাদের জন্য আমাদের ‘সা’ এবং আমাদের ‘মুদ্দ’-এ (পরিমাপ যন্ত্রে) বরকত দাও।
হে আল্লাহ! নিশ্চয় ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) তোমার বান্দা, তোমার বন্ধু এবং তোমার নবি। তিনি (ইবরাহিম আলাইহিস সালাম) তোমার কাছে মক্কার জন্য দোয়া করেছিলেন।
হে আল্লাহ! নিশ্চয় মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার বান্দা ও তোমার নবি। তিনি মাদিনার তোমার কাছে মাদিনার জন্য দোয়া করেছেন।
আর আমি তাঁদের (হজরত ইবরাহিম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) মতো মক্কা, মাদিনা ও আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য দোয়া করছি। আর এর সঙ্গে আরও সমপরিমাণ দোয়া করছি।’
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো মতে যে কোনো নতুন ফল দেখলে কিংবা খেলে আল্লাহর কাছে বরকতের জন্য দোয়া করা। ছোটদের হাতে নতুন ফল হাদিয়া দেয়া তাঁরই অন্যতম সুন্নাত ইবাদাত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নতুন ফল দেখা ও খাবারে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করে দোয়া পড়া, দেশের দোয়া করার এবং ফলের বরকতের জন্য দোয়া করার পাশাপাশি ছোটদের ফল হাদিয়া দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।