প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২৫, ১৮:৫৩
ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা সারফেস ডাইলেকট্রিক ব্যারিয়ার ডিসচার্জ বা এসডিবিডি পদ্ধতি ব্যবহার করে একটি উন্নত প্লাজমা ডিভাইস তৈরিতে সফল হয়েছেন, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ডিভাইসটি বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ঠান্ডা প্লাজমা তৈরি করতে সক্ষম, যা চিকিৎসা, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জীবাণুমুক্তকরণ এবং শিল্প উৎপাদনে বহুমাত্রিক প্রয়োগের পথ খুলে দিচ্ছে। গবেষণাটির মূল নেতৃত্বে ছিলেন ইরানের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী আমির হোসেইন ফাগিহি, যিনি সম্প্রতি ইসরায়েলের হামলায় তেহরানে নিহত হন। তার দিকনির্দেশনায় কাজ করা গবেষকরা দেশীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তিতে এই ডিভাইসটি তৈরি করেন।
প্লাজমা প্রযুক্তির এই উদ্ভাবন মূলত এমন একটি পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে কম শক্তি খরচে সহজ নিয়ন্ত্রণে প্লাজমা উৎপাদন সম্ভব হয়। এটি অন্যান্য প্রচলিত নিম্নচাপ প্লাজমা প্রযুক্তির তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব, যা চিকিৎসা ও শিল্প খাতে কার্যকরভাবে ব্যবহারযোগ্য। বিশেষ করে পৃষ্ঠতল জীবাণুমুক্তকরণ, ওজোন উৎপাদন, মুদ্রণ, প্যাকেজিং এবং বস্ত্রশিল্পে এটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক শক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতায় পরিচালিত এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র একটি গবেষণা সফলতা নয় বরং বাস্তবসম্মত শিল্প সমাধান হিসেবেও প্রতিভাত হয়েছে। এসডিবিডি প্লাজমা ডিভাইস চিকিৎসা ও দন্তচিকিৎসায় রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
এই আবিষ্কার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের দিকটিকে আরও জোরদার করে তুলেছে। বিশ্বব্যাপী নানা নিষেধাজ্ঞা ও চাপ সত্ত্বেও দেশটির বিজ্ঞানীরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতায় এগিয়ে যাচ্ছে। ইরান সরকার ও গণমাধ্যম জানিয়েছে, বহিরাগত হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই ধারাবাহিক অগ্রগতি দেশের আত্মনির্ভরশীলতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
অগ্রগতির এই ধারায় ইরান শুধু পরমাণু শক্তির সামরিক ব্যবহার থেকে দূরে থাকছে না, বরং কৃষি ও চিকিৎসার মতো মানবকল্যাণমূলক খাতে প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রায় এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। দেশটির বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত করে রপ্তানিযোগ্য পর্যায়েও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।