রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহর জন্য মহান শিক্ষক। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘ইন্নামা আনা বুয়িসতু মুয়াল্লিমান’ অর্থাৎ নিশ্চয় আমি শিক্ষক হয়ে এসেছি। যার ফলে আরবের অন্ধকার সমাজকে আলোকিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। দূর করেছিলেন অন্যায়-অনাচারসহ সব জুলুম নির্যাতন। ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে অন্যায়-অত্যাচার দূর করতে কুরআন-হাদিসের জ্ঞানের বিকল্প নেই। তাই মানুষকে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জ্ঞানে আলোকিত হতেই নসিহত পেশ করেছেন বিশ্বনবি। যা গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য আনুকরণ করা আবশ্যক।
কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অমূল্য নসিহত হলো-
>> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিনের মৃত্যুর পর তার আমল ও ভালো কাজসমূহ থেকে নিশ্চিতভাবে যা তার আমলনামায় যোগ হয়, তাহলো-
- (ওই) ‘ইলম’, যা সে শেখার পর প্রচার করেছে অথবা
- নেক সন্তান, যাকে রেখে সে মারা গেছে অথবা
- কুরআন মাজিদ, যা সে মীরাসরূপে ছেড়ে গেছে অথবা
- মসজিদ, যা সে নিজে নির্মাণ করে গেছে অথবা
- মুসাফিরখানা, যা সে মুসাফিরদের সুবিধার্থে নির্মাণ করে গেছে অথবা
- সাদাকাহ যা সে নিজের মাল থেকে তার সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় বের (দান) করে গেছে।
এ সব কাজের সাওয়াবও তার মৃত্যুর পর তার সঙ্গে এসে মিলিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতি সমৃদ্ধি শান্তি ও নিরাপত্তায় ইলম অর্জনের বিকল্প নেই। একমাত্র যথাযথ ইলম বা জ্ঞান অর্জনই মানুষকে সঠিক দিকে ধাবিত করে। পাপাচারমুক্ত সরল সঠিক পথ দেখায়। কল্যাণ ও নিরাপত্তার পথ দেখায়। কুরআন-সুন্নাহর আলো যে হৃদয় ধারণ করে সে হৃদয়ে গোনাহের অন্ধকার অবস্থান করতে পারে না। ইসলামের বিধি-বিধান পরিচালিত পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র পায় শান্তি ও নিরাপত্তা। ইসলামের সোনালী যুগের ইতিহাসই তার প্রমাণ।
আবার যে ব্যক্তি কুরআন সুন্নাহর জ্ঞান মানুষের কাছে প্রচার ও প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করবে তাকে ইলম বা জ্ঞান প্রচার হতে হবে নির্ভূল। হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
>> হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে সৌন্দর্য করে দেন, যিনি আমাদের কাছে কিছু শোনার পর তা অন্যের কাছে যথাযথ বা অনুরূপ সেভাবেই পৌঁছে দেয়, যেভাবে সে শুনেছিল। কেননা যাদের কাছে (হাদিস) পৌঁছানো হয় তাদের কেউ কেউ এমনও আছে, যে ওই বর্ণনাকারী অপেক্ষা অধিক স্মৃতি শক্তির অধিকারী ও সমঝদার ‘ (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান)
এ হাদিসে যে কোনো শিক্ষা বা কুরআন-সুন্নাহর তথ্য প্রচারকারীর উত্তম মর্যাদার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই যে কোনো শিক্ষা বা কুরআন-সুন্নাহর নসিহত প্রচারের আগে তা ভালোভাবে জেনে নেয়ার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এমনও হতে পারে কুরআন-সুন্নাহর আলোচনা এমন এক ব্যক্তি বর্ণনা করলো যার জ্ঞানের স্বল্পতা বা স্মরণ শক্তি কম। আর যার কাছে বর্ণনা করা হলো সে প্রখর মেধাসম্পন্ন বা ভালো স্মরণ শক্তির অধিকারী।
ভালো স্মরণ শক্তির অধিকারী কোনো ব্যক্তি যদি কুরআন-সুন্নাহর কোনো ভুল বর্ণনা শুনে বা জেনে তা প্রচার করতে থাকে তবে তা হবে মারাত্মক অন্যায়। আর তাতে মানুষ সঠিক তথ্য থেকে হবে বঞ্চিত। ভুল পথে পরিচালিত হবে। যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণও বটে। তাই জ্ঞান প্রচারে সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী সঠিক জ্ঞান অর্জন করার তাওফিক দান করুন। দ্বীনের সঠিক প্রচার ও প্রসারে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের যথাযথ কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।