চলতি বছরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিককালের ভয়াবহতম সংঘাত এখনো কূটনৈতিক ও সামরিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সীমান্ত এলাকা। টানা ১৮ দিন ধরে চলা এই সংঘাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। তবে এই লড়াইয়ে চরম লজ্জার মুখে পড়ে ভারত, বিশেষ করে সামরিক সরঞ্জাম ও পরিকল্পনায় ঘাটতির কারণে পাকিস্তানের কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে ভারতীয় বাহিনী।
এই সংঘাত নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপসেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং সম্প্রতি দিল্লিতে এক সামরিক প্রযুক্তি বিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধকালীন সময় ভারতকে ‘এক নয়, তিন প্রতিপক্ষের’ বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। চীন ও তুরস্ক সরাসরি না জড়ালেও পাকিস্তানকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ তার।
চীনের ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল বলেন, চীন শুধু অস্ত্র সরবরাহ করেনি, বরং এই সংঘাতকে নিজেদের অস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাইয়ের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তানের ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জামের ৮১ শতাংশই চীন থেকে আসা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, সংঘাতের সময় পাকিস্তান ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে যে নির্ভুল তথ্য জানত, তাও চীনের স্যাটেলাইট ও গোয়েন্দা প্রযুক্তির সাহায্যে অর্জিত বলে দাবি করেন তিনি।
এছাড়া তুরস্কের ভূমিকাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। রাহুল আর সিং বলেন, ড্রোন ও প্রশিক্ষিত অপারেটরের মাধ্যমে পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে তুরস্ক। ফলে সংঘাতের সময় পাকিস্তান যেমন টেকনোলজিক্যালি শক্তিশালী ছিল, তেমনি আন্তর্জাতিক সমর্থনও পেয়েছে।
এই বক্তব্য ঘিরে ভারতে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ চীনের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীতির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “২০২০ সালে লাদাখে চীন স্থিতাবস্থা বদলে দিলেও প্রধানমন্ত্রী মোদি তাদের ক্লিনচিট দিয়েছিলেন।”
সামরিক বিশ্লেষকরাও রাহুল সিংয়ের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার প্রফুল্ল বক্সী বলেন, “সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা বহুদিন ধরেই সেনাবাহিনীর দুশ্চিন্তার কারণ। এটা দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।”
পররাষ্ট্র বিশ্লেষক উপমন্যু বলেন, “চীন ও তুরস্কের মতো শক্তিধর দেশ যখন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়, তখন ভারতকে কৌশলগত দিক থেকে আরও সতর্ক হতে হবে।”
সবশেষে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং বলেন, চীন তাদের পুরোনো কৌশল, ‘ধার করা ছুরি দিয়ে হত্যা’, এবার ভারতীয় উপমহাদেশে কার্যকর করেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের সংঘাতে ভারত যেন আর কৌশলগতভাবে পিছিয়ে না পড়ে, সে লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।