প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২৫, ১১:২
হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম ইসলামের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় সময়। এই মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে এবং এতে ইবাদত-বন্দেগির বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এই মাসে রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদেরও রোজার প্রতি উৎসাহ দিতেন। বিশেষ করে আশুরার দিন, অর্থাৎ ১০ই মহররম, মুসলিম ইতিহাসে বহুবিধ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার দিন হিসেবে পরিগণিত হয়।
রাসূলুল্লাহ সা. মদিনায় এসে দেখতে পান, ইহুদিরা আশুরার রোজা রাখে। জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এই দিনেই হযরত মূসা আ. ফেরাউনের হাত থেকে বাঁচেন। তখন রাসূল সা. বলেন, আমরা মূসা আ.-এর অনুসরণে তাদের চাইতে বেশি হকদার। এরপর তিনি রোজা রাখেন এবং সাহাবিদেরও রাখার নির্দেশ দেন। হাদিসে এসেছে, আশুরার রোজা এক বছর আগের গুনাহ মাফের কারণ হয়। ফিকাহ শাস্ত্র অনুসারে, একক দিন রোজা না রেখে ৯ ও ১০ বা ১০ ও ১১ মিলিয়ে দুই দিন রোজা রাখা উত্তম।
মহররম মাসের ফজিলতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই মাসে বহু নবী-রাসূল ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। যেমন হযরত আদম আ. এর তাওবা কবুল, হযরত নূহ আ. এর নৌকা রক্ষা, হযরত মূসা আ. ও বনি ইসরাইলের মুক্তি, হযরত ইউনুস আ. এর মুক্তি, হযরত ঈসা আ. এর জন্ম ও আসমানে উত্তোলন, হযরত ইবরাহিম আ. এর জন্ম ও আগুন থেকে মুক্তি ইত্যাদি।
তবে এই মাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হলো রাসূলুল্লাহ সা.-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন রা.-এর কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত। তিনি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। এই ঘটনা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে গভীর বেদনার ছাপ রেখে গেছে এবং আশুরার দিনকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
আশুরার দিনে দান-খয়রাত করার ফজিলত সম্পর্কেও হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ইমাম বায়হাকী উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি এই দিনে উদারভাবে দান করে, আল্লাহ সারা বছর তার রিজিকে বরকত দেন। এ মাসে আত্মশুদ্ধি, তওবা এবং নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অনন্য সুযোগ রয়েছে।
মহররমের শিক্ষা হলো তাওবা, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা ও ন্যায়ের পক্ষে অবিচল থাকা। এই মাসে অতীত নবীদের জীবনের ঘটনাগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি এবং নিজের জীবনকে আরো সৎ পথে পরিচালিত করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে মহররমের ফজিলত অনুধাবন করে আমল করার তাওফিক দান করেন।