প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১০:২৮
ইসলামে অপচয়কে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই” (সূরা ইসরা: ২৭)। অপচয় শুধু সম্পদের অপমান নয়, বরং এটি অহংকার, গাফিলতি ও অকৃতজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি। আজকের সমাজে বিশেষ করে খাবার ও পোশাকে অপচয় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। ইসলামের আলোকে এর প্রতিকার ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো আমাদের জানা থাকা দরকার।
প্রথমত, খাবারের ক্ষেত্রে অপচয় আজ একটি সাধারণ সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি পর্যন্ত প্রতিদিন অঢেল পরিমাণ খাবার ফেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমরা খাও, দান করো এবং সংরক্ষণ করো, তবে অপচয় করো না।" (মুসলিম)।
দ্বিতীয়ত, পোশাকের অপচয়ও ইসলামের দৃষ্টিতে অনুচিত। শুধু ফ্যাশন কিংবা বিলাসিতার কারণে প্রতিনিয়ত পোশাক পরিবর্তন, অপ্রয়োজনে নতুন জামা-কাপড় কেনা, অতিরিক্ত কাপড় সংরক্ষণ করা সবই অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (সা.) নিজে সাধারণ পোশাক পরতেন এবং যতক্ষণ না তা ছিঁড়ে যেত, ততক্ষণ তা ব্যবহার করতেন।
তৃতীয়ত, অপচয় ব্যক্তির চরিত্রের দুর্বলতাও নির্দেশ করে। একজন মু’মিন সর্বাবস্থায় ভারসাম্যপূর্ণ ও সচেতন। আল্লাহ তা'আলা বলেন, “তারা ব্যয় করে অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করে” (সূরা ফুরকান: ৬৭)।
চতুর্থত, অপচয় শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ নয়, বরং জাতীয়ভাবে তা সম্পদের অপচয় ঘটায়। একটি সমাজ যত বেশি অপচয়প্রবণ হয়, তত বেশি দরিদ্রতার দিকে ধাবিত হয়। অথচ ইসলাম সমাজে ভারসাম্য, সংযম ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন শেখায়।
পঞ্চমত, অপচয়কে বন্ধ করা মানে শুধু সম্পদ রক্ষা নয়, বরং তা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ অপচয় বর্জন করা আল্লাহর নির্দেশ পালন করা। যারা অপচয় পরিহার করে, তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে একধাপ এগিয়ে যায়।
ষষ্ঠত, আমাদের উচিত, সমাজে অপচয় বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে ইসলামের এ শিক্ষাগুলো পৌঁছে দিতে হবে।
সপ্তমত, বিশেষ করে বিশেষ দিন বা উৎসবে আমরা যাতে অপচয়ে লিপ্ত না হই, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদ, বিয়ে বা জন্মদিন—এসব উপলক্ষে মিতব্যয়িতা ও সংযম থাকা জরুরি।
অষ্টমত, ইসলামের শিক্ষায় ফিরে গিয়ে আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনে পরিমিতি ও ভারসাম্য বজায় রাখাই প্রকৃত মু’মিনের পরিচয়। অপচয় বর্জনের মাধ্যমে আমরা দুনিয়াতেও শান্তি লাভ করবো, আর পরকালের হিসাব থেকেও মুক্ত থাকতে পারবো।