উড়োজাহাজ স্বল্পতার অজুহাতে বরিশাল সেক্টরে ফ্লাইট পরিচালনা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় বরিশাল বিভাগের রাজধানীসহ পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পথ বন্ধ হয়ে গেল। এতে সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বরিশাল বিমানবন্দর চালুর পর থেকেই নানা অজুহাতে একাধিকবার ফ্লাইট বন্ধ ও চালু করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে নিয়মিত ফ্লাইট পুনরায় চালু করা হয়।
তবে পদ্মা সেতু চালুর পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সাপ্তাহিক ফ্লাইট সংখ্যা হ্রাস করে সপ্তাহে তিনদিন করা হয়। অথচ বরিশাল রুটে ধারন ক্ষমতার ৭০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন হয়ে আসছিল। কিন্তু তারপরও ফ্লাইট সংখ্যা আর বাড়ানো হয়নি, বরং উড়োজাহাজ স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে এখন পুরোপুরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিমান ফ্লাইট বন্ধের প্রতিবাদে বরিশালবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, “উড়োজাহাজ সংকটের কারণে শুধু বরিশাল নয়, আরও দুটি রুটে ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বরিশালে আবার ফ্লাইট চালু হবে।” তিনি আরও বলেন, “দুইটি উড়োজাহাজ পরিচালনযোগ্য হলেই ফ্লাইট পুনরায় চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।”
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে ঢাকা থেকে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালে পৌঁছে মাত্র ২৫ মিনিটে ফ্লাইট পরিচালনা করেন ক্যাপ্টেন রাইহান আহমেদ। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় বিমানটি ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরে যায়।
এদিকে বরিশাল বিভাগ স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম রাজন এবং সদস্য সচিব মিজানুর রহমান এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বরিশালবাসীর সঙ্গে এটি আরেকটি বিমাতাসুলভ আচরণ। এটি জনস্বার্থের পরিপন্থী। আমরা অবিলম্বে বরিশাল রুটে নিয়মিত ফ্লাইট চালুর দাবি জানাই।”
সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, বরিশালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের বিমান যোগাযোগ বন্ধ হলে তা অর্থনীতি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জনগণের দাবি, অজুহাত নয়, স্থায়ী ও নিরবচ্ছিন্ন বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করা হোক।
উল্লেখ্য, অভ্যন্তরীন সেক্টরের জন্য বিমান-এর ৭৪ আসনের ৫টি ‘ড্যাস-৮ কিউ-৪০০’ মডেলের উড়োজাহাজ থাকলেও তার দুটি আপাতত চলাচল অযোগ্য। যা মেরামত অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ। অপর ৩টির মধ্যে দুটি পরিপূর্ণ মেরামতে অন্তত একমাস সময় লাগবে । ইতোমধ্যে কানাডার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে বলে জানিয়ে বিমান এর আপর এক কর্মকর্তা জানান, ‘দুটি এয়ারক্রাফটই পরিপূর্ণ মেরামত শেষে আমরা পুনরায় বরিশাল সহ সাময়িক বন্ধ সবগুলো সেক্টরেই যাত্রী পরিবহন শুরু করবো।