প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৪২
ইসলামে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কোরআন ও হাদীসে একাধিক স্থানে বলা হয়েছে, কেউ যদি কারো কাছ থেকে ঋণ নেয়, তাহলে সময়মতো তা পরিশোধ করা তার জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক। হাদীসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ধার শোধের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি শোধ করে না, সে একজন জালিম।” (সহিহ বুখারী)
আধুনিক সমাজে মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা ধার নেয়—ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা বা ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য। কিন্তু অনেকেই সময়মতো ঋণ শোধ করেন না, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করে বা ভুলে যাওয়ার ভান করেন। ইসলামে এই আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়। হাদীসে এসেছে, “ধার পরিশোধে অযথা দেরি করা মুমিনদের জন্য জুলুম।” (সহিহ মুসলিম)
কেউ যদি প্রকৃত অসুবিধায় পড়ে যায় এবং ধার শোধে সাময়িক অক্ষম হয়, তবে ইসলাম তাকে সময় দেওয়ার কথা বলেছে। আল্লাহ বলেন, “যদি কোনো দেনাদার সংকটে থাকে, তাহলে তাকে সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত সময় দাও।” (সূরা বাকারা: ২৮০) এই আয়াতে সহানুভূতির দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে ইচ্ছাকৃত গাফিলতি বরদাশতযোগ্য নয়।
আর্থিক লেনদেনে সাক্ষী রাখা এবং লিখিত চুক্তির কথাও কোরআনে বলা হয়েছে। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত একে অপরের কাছে ঋণ গ্রহণ কর, তাহলে তা লিখে নাও।” (সূরা বাকারা: ২৮২) এই আয়াতটি কোরআনের দীর্ঘতম আয়াত এবং এতে আর্থিক স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আমরা যদি দুনিয়াতে ধার খেলামেলাভাবে নিয়ে থাকি এবং সময়মতো তা পরিশোধ না করি, তাহলে কিয়ামতের দিন এই ঋণ হিসাব চাওয়া হবে। এমনকি শহীদ ব্যক্তিও ঋণমুক্ত না হলে জান্নাতে প্রবেশে বিলম্ব হতে পারে বলে হাদীসে উল্লেখ আছে।
তাই একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত ধার নেওয়ার আগে চিন্তা করা, প্রয়োজনে নেওয়া এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তা পরিশোধ করা। একইসাথে, যদি কেউ আমাদের কাছ থেকে ধার চায় এবং সত্যিই তার প্রয়োজন থাকে, তাহলে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা এবং সহজ শর্তে সহানুভূতির হাত বাড়ানো।
সুদের ওপর ধার নেওয়া বা দেওয়া ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তাই যে কোনো আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেই সুদের সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে চলা জরুরি। ইসলামী শরিয়ার আলোকে আমরা যদি আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করি, তাহলে সমাজে ন্যায়বিচার ও পারস্পরিক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা পাবে।