প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১২:৪
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন ছিল পূর্ণাঙ্গ ইসলামের বাস্তব রূপ। তিনি শুধু ইবাদতের জন্য নয়, বরং সর্বোচ্চ নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে মানবজাতির জন্য আদর্শ হয়ে এসেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম’’ (বুখারি)। বর্তমান সময়ে মুসলমানদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি, অনৈক্য এবং সমাজে যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, তার একটি বড় কারণ হলো উত্তম চরিত্রের অভাব। অথচ মহানবী (সা.) স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘‘আমি উত্তম চরিত্র পরিপূর্ণ করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি’’ (মুসনাদে আহমদ)।
একজন প্রকৃত মুসলমান কেবল নামাজ, রোজা, হজ কিংবা যাকাত আদায়েই পরিপূর্ণ হয় না, বরং তার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, লেনদেন ও পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের প্রতিটি স্তরে নৈতিকতা থাকতে হবে। মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবীদের এমনভাবে গড়ে তুলেছিলেন, যারা শুধু দুনিয়ার উন্নতি নয়, আখিরাতের জন্যও নিজেদেরকে প্রস্তুত করতেন উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে।
ইসলামে ভালো চরিত্রের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, হাদিসে এসেছে, ‘‘একজন ভালো চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি নফল রোযা ও নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির মর্যাদা পাবে’’ (তিরমিজি)। অর্থাৎ শুধুমাত্র ইবাদতই নয়, ইখলাস ও উত্তম ব্যবহারও আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই, তবে প্রথমেই নিজের চরিত্র সংশোধনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে বহুবার আমরা এমন আচরণ করি যা ইসলাম সম্মত নয়। গীবত, মিথ্যা বলা, প্রতারণা, কটুভাষা ব্যবহার—এসবই চরিত্রের বিচ্যুতি। অথচ ইসলাম আমাদের বিনয়, সহানুভূতি ও ধৈর্যের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয়।
বিশ্বজুড়ে ইসলামবিদ্বেষ ও ভুল ব্যাখ্যার যে ধারা চলছে, তার জবাব হবে আমাদের চরিত্র। একজন ভালো মুসলমানের সৌন্দর্য ও সততা এমনভাবে ফুটে উঠতে হবে যেন সেটি অন্যের জন্য দাওয়াতের মাধ্যম হয়।
তরুণ প্রজন্মকে শুধু ধর্মীয় জ্ঞানেই শিক্ষিত করলেই হবে না, তাদের নৈতিকভাবে বলীয়ান করে তুলতে হবে। ইসলামের সৌন্দর্য আচরণে, ব্যবহার্যে, দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকাশ পাবে—এই বার্তা দিতে হবে পরিবার ও শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে।
সবশেষে বলা যায়, একজন মুসলমানের পরিচয় তার নাম, পোশাক বা জাতিগত পরিচয়ে নয়; বরং তার মুখের কথা, মন-মানসিকতা ও চারিত্রিক গুণাবলির মাধ্যমে। চলুন, আমরা সবাই উত্তম চরিত্র অর্জনে সচেষ্ট হই এবং প্রিয়নবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করি।