প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১১:২৯
আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মুমিনের প্রথম করণীয় হলো দুনিয়ার প্রতি মোহ কমানো এবং অন্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা জাগানো। কুরআন ও হাদীস বারবার সতর্ক করে যে, দুনিয়া হচ্ছে পরীক্ষা, আর এ পরীক্ষায় সফল হতে হলে হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করতে হবে। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যার দুনিয়ার চিন্তা বাড়ে, আল্লাহ তার গরিবিকে সামনে নিয়ে আসেন এবং তার ফাঁকা জীবনকে ব্যস্ততায় ভরে দেন। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি আখিরাতের চিন্তা করে, আল্লাহ তার অন্তরকে ধনসম্পদে ভরিয়ে দেন এবং দুনিয়া তার কাছে বিনীত হয়ে আসে।” (তিরমিজি)
দুনিয়া কোন মন্দ জিনিস নয়, বরং দুনিয়া মানুষের জীবনধারণের অবলম্বন। কিন্তু দুনিয়ার প্রতি অন্ধ মোহ, লোভ ও প্রতিযোগিতা মানুষের অন্তরকে কলুষিত করে এবং পরকালের সফলতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এজন্যই ইসলামে ‘যুহদ’ বা দুনিয়ার মোহমুক্ত জীবনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “তোমরা দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ হারাও, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর মানুষের ধন-সম্পদের প্রতি লোভ ত্যাগ করো, মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে।” (ইবনে মাজাহ)
হযরত আলী (রা.) বলেছেন, “দুনিয়া পেছন থেকে যাচ্ছে, আর আখিরাত সামনে এগিয়ে আসছে। অতএব তোমরা আখিরাতের প্রতি মন দাও, কারণ আজ কাজের সময়, হিসাব নেই; আর কাল হিসাব হবে, কাজ করার সুযোগ থাকবে না।” এ কথার মাধ্যমে বুঝা যায়, মুমিনের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ, যা তাকে আখিরাতের সফলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইমাম গাযালি (রহ.) বলেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়ার কাজকে এমনভাবে করে যেন সে চিরকাল বাঁচবে, আর আখিরাতের কাজকে করে যেন কাল মারা যাবে—সে কখনো সফল হতে পারে না।” অর্থাৎ আমাদের কর্মপন্থা হতে হবে পরকেন্দ্রিক, যাতে প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
আজকের সমাজে দুনিয়ার প্রতি মোহ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। চাকরি, সম্পদ, খ্যাতি—এসব অর্জনের পেছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ ভুলে যাচ্ছে যে, তার অন্তিম গন্তব্য হচ্ছে কবর এবং শেষ বিচারের দিন। একজন মুমিনের উচিত, দুনিয়াকে ব্যবহার করা আখিরাতের প্রস্তুতির জন্য, যেন সে সফলতার সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।
সুতরাং দুনিয়ার জীবনকে আমরা যদি হালাল উপার্জন ও ভালো কাজে ব্যয় করি, তাহলে তা আমাদের আখিরাতের জন্য পুঁজি হবে। আর যদি দুনিয়ার মোহে পড়ে যাই, তবে আখিরাতের ক্ষতিই আমাদের ভাগ্যে জুটবে। তাই প্রতিদিন অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা, দুনিয়ার মোহ কমানো এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য।