প্রকাশ: ৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৭
ইসলামের দৃষ্টিতে কিয়ামতের আলামতগুলো মানুষের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদীসে কিয়ামতের ছোট ও বড় আলামতের কথা বলেছেন। তাঁর বর্ণনায় উঠে এসেছে, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মানুষের জীবনে বরকত কমে যাবে, বিশেষত সময়ের বরকত। হাদীসে এসেছে, “কিয়ামতের অন্যতম আলামত হবে—সময় সংকুচিত হয়ে যাবে।” (সহীহ বুখারী: ৯৯২)।
এই সময় সংকোচনের অর্থ অনেকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একদিকে দিনরাত্রির সময়কাল কমে আসবে না বরং মানুষের কাজ, উপার্জন, ইবাদত—সব ক্ষেত্রেই সময় অপ্রতুল মনে হবে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাজের অগ্রগতি হবে না, মনে হবে সময় যেন উড়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, এটি বরকতের অপসারণ। পূর্বের যুগে মানুষ অল্প সময়ে অধিক ইবাদত, জ্ঞান অর্জন, সংসার পরিচালনা সবই করতে পারতো। এখন মানুষ প্রযুক্তি ও আধুনিকতার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সময়ের ঘাটতিতে ভোগে।
এছাড়া কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে মানুষের অন্তর কঠিন হয়ে যাবে, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা বাড়বে, আখিরাতের চিন্তা কমে যাবে। এই সবকিছুই সময়ের বরকত কমে যাওয়ার কারণ। আরও বলা হয়েছে, মানুষ প্রযুক্তির দাস হয়ে পড়বে, যা তাদের জীবনের গতি বাড়াবে কিন্তু গুণগত মান কমাবে। এভাবে বরকত হারিয়ে যাওয়া এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ও আত্মিক দিক থেকে দুর্বলতা তৈরি করে। ইসলাম মানুষকে সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে উৎসাহ দেয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, “দুইটি নিয়ামতের ব্যাপারে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত—স্বাস্থ্য ও অবসর।” (সহীহ বুখারী: ৬৪১২)।
সুতরাং সময়কে অবহেলা না করে নিয়মতান্ত্রিক ও ইবাদতপূর্ণ জীবন গড়ে তোলা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব। ফজরের পর আল্লাহর জিকির, সকালবেলার তেলাওয়াত, দিনে সালাতসমূহ ঠিক সময়ে আদায় করা, অকারণে মোবাইল বা স্ক্রিনে সময় অপচয় না করা এসবই সময়ের বরকত ফিরিয়ে আনতে পারে। আল্লাহর ভয়, আখিরাতের স্মরণ এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুসলিমরা সময়ের সঠিক ব্যবহারে ফিরে আসতে পারে। কিয়ামতের প্রস্তুতি শুধু আখিরাতের জন্য নয় বরং দুনিয়ার সফলতাও এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।