প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৮
মানুষের চরিত্র, আচরণ ও সামাজিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামে রয়েছে চমৎকার দিকনির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের জীবনের প্রতিটি দিকেই হেদায়াত দিয়েছেন, যা শুধু আখিরাত নয়, দুনিয়ার জীবনকেও করে তোলে সুন্দর ও সফল। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সেই মুসলমানই উত্তম, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি)। এ হাদিসটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। সমাজে অশান্তি, হিংসা ও বিশৃঙ্খলার মূল কারণ যখন অন্যের প্রতি অসহিষ্ণুতা, তখন একজন প্রকৃত মুসলমানকে হতে হবে নম্র, নিরাপদ ও সহনশীল।
একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হাসি-খুশি মুখে ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাও একটি সদকা।’ (তিরমিজি)। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, একজন মুসলমানের ছোট্ট একটি হাসিও অন্যের জন্য কল্যাণকর হতে পারে, এমনকি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হয়। সমাজে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও বন্ধন তৈরিতে এই হাদিস অনন্য ভূমিকা রাখে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনকে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে কিংবা চুপ থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। সামাজিক জীবনে অশান্তির বড় কারণ হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা, গীবত, অপবাদ বা কটু মন্তব্য। এই হাদিস শেখায়—ভাষা নিয়ন্ত্রণ করাই একজন উত্তম মুসলিমের পরিচয়।
এছাড়া তিনি বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভাইয়ের জন্য ঐ জিনিসই পছন্দ করো, যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ করো।’ (বুখারি ও মুসলিম)। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও একতাবদ্ধ সমাজ গঠনে এই হাদিস অত্যন্ত কার্যকর। যদি প্রতিটি ব্যক্তি এ হাদিস মেনে চলে, তবে সমাজ থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভাজন দূর হওয়া খুব সহজ।
সবশেষে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সহজ করো, কঠিন করো না; সুসংবাদ দাও, ঘৃণা করিও না।’ (বুখারি)। আজকের সময়ে, যখন মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনকেই কঠিন মনে করে এড়িয়ে চলতে চায়, তখন এই হাদিস ইসলামের সহজতা ও মানবিক দিকগুলো তুলে ধরে। একজন উত্তম মুসলমান শুধু নামাজ-রোজায় নয়, বরং আচরণ, কথা ও মনোভাবেও ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরেন।
এইসব হাদিস শুধু আখিরাত নয়, দুনিয়ার জীবনকেও গঠনমূলক করে তোলে। তাই রাসুলের দেখানো এ সহজ পথগুলো অবলম্বন করলে একজন মুসলমান পারবে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও বরকতময় জীবনযাপন করতে।