প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১০:১৩
মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যুর পর মানুষের যাত্রা শেষ নয়, বরং শুরু হয় অনন্ত জীবনের প্রথম অধ্যায়—কবর। কবরের প্রথম রাতটি এমন একটি বাস্তবতা, যা নিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের সতর্ক করেছেন বহুবার। তিনি বলেছেন, কবর হচ্ছে জান্নাতের একটি বাগান অথবা জাহান্নামের একটি গর্ত। অর্থাৎ, এই রাতেই শুরু হবে একজন মৃত ব্যক্তির প্রকৃত পরিণতির ধারা। নবীজি (সা.) আরও বলেন, মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার তিনটি জিনিস কবর পর্যন্ত যায়—পরিবার, সম্পদ ও আমল। কিন্তু ফিরে আসে পরিবার ও সম্পদ, কেবল আমলটিই কবর পর্যন্ত সঙ্গ দেয়। এই কথাগুলি স্পষ্ট করে দেয় যে, আমলই কবরের প্রথম রাতকে আলোকিত বা অন্ধকারাচ্ছন্ন করতে পারে।
প্রথম রাতে মুনকার ও নাকির নামে দুই ফেরেশতা এসে মৃত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করবেন: ‘তোমার রব কে? তোমার ধর্ম কী? এবং এ ব্যক্তি (রাসুল সা.) সম্পর্কে তোমার মতামত কী?’ যে ব্যক্তি জীবদ্দশায় ঈমানদার ও সৎ আমলকারী ছিলেন, তিনি সহজেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি গাফিলতায় জীবন কাটিয়েছেন, তার মুখ তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে। তার জন্য কবর সংকুচিত হয়ে ওঠবে, এবং আযাব শুরু হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন এবং সাহাবাদেরও তা করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাও, কারণ তা সত্য ও কঠিন।’ এটি বোঝায় যে, কবরের প্রশ্ন সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। বরং জীবিত অবস্থায় আমল ঠিক করা এবং ঈমান দৃঢ় রাখার মাধ্যমেই ওই ভয়ানক রাতকে শান্তিময় করা সম্ভব।
তবে যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছেন, নামাজ কায়েম করেছেন, রমজান রোজা রেখেছেন, সদকা দিয়েছেন ও জীবনের প্রতিটি দিক ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী পরিচালিত করেছেন, তাদের জন্য কবর হবে প্রশান্তির স্থান। ফেরেশতারা তাদেরকে শান্তির বার্তা দিয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন। তাদের কবর হবে প্রশস্ত এবং জান্নাতের সুবাসে পরিপূর্ণ।
তাই আমাদের উচিত, এই দুনিয়ার চটকদার জীবন নয়, বরং আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কবরের প্রথম রাত যেন আমাদের জন্য আযাব নয়, বরং প্রশান্তির শুরু হয়, সে জন্য আজ থেকেই তাওবা করা, নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং সৎ আমলের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
পরিশেষে স্মরণ রাখা উচিত, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী কিন্তু আখিরাত চিরস্থায়ী। তাই কবরের প্রথম রাত যেন আলোয় পরিপূর্ণ হয়, সে লক্ষ্যে আমাদের চলার পথ ঠিক করতে হবে এখনই।