পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কোরআন। আল্লাহ তাআলা এই কিতাব বিশ্ববাসীর জন্য নাজিল করেছেন, যাতে মানুষ এর মাধ্যমে হিদায়াত লাভ করতে পারে। কোরআন পাঠ, এর অর্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং এর বাণীকে জীবনে বাস্তবায়ন করাও এক ধরনের ইবাদত।
অনেকের জীবনে কোরআনের প্রকৃত ভালোবাসা অনুপস্থিত। এর ফলে আমরা কোরআনকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে পারিনি। যখন কোনো বস্তুকে অন্তর থেকে ভালোবাসা হয়, তখন তা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ মনে হয়। ঠিক তেমনি কোরআনের সত্যিকার ভালোবাসা হৃদয়ে জাগ্রত হলে তা ছাড়া এক মুহূর্তও কাটানো কঠিন হয়ে উঠবে।
আজকাল অনেকেই নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করেন। কিন্তু ব্যস্ততার অজুহাতে অনেকেই তা কমিয়ে দেন বা বন্ধ করে দেন। অথচ ব্যস্ত জীবনের চাপে পড়ে আমাদের উচিত কোরআনের সঙ্গে আরও বেশি সম্পর্ক গড়ে তোলা। কারণ কোরআন মৃত হৃদয়কে সজীব করে, ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করে এবং অস্থির মনকে শান্তি দান করে।
শিশুকাল থেকেই কোরআন শিক্ষা
কোরআনের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার প্রথম ধাপ হলো শৈশব থেকেই এর সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো। শিশুকে ছোটবেলা থেকেই ধীরে ধীরে কোরআন শিক্ষা দিতে হবে। প্রথমে ছোট ছোট সুরা শেখানো, পরে ধাপে ধাপে বড় সুরাগুলোতে এগিয়ে যাওয়া। যখন তার বয়স ও বোধশক্তি পরিপক্ব হবে, তখন তাকে কোরআনের অর্থ ও তাফসীর বুঝতে সাহায্য করতে হবে।
রাতের বেলা কোরআন তিলাওয়াত
রাতের নীরবতা কোরআন চর্চার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। দিনের ব্যস্ততা ও কোলাহলের মধ্যে গভীরভাবে কোরআন নিয়ে চিন্তা করা কঠিন। তাই নিয়মিত রাতের কিছু সময় কোরআন তিলাওয়াত ও তার অর্থ অনুধাবনের চেষ্টা করা উচিত। এতে কোরআনের গভীর জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হবে এবং এর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।
কোরআনের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত দোয়া করতে হবে। তিনি যেন আমাদের হৃদয়ে কোরআনের মহব্বত জাগ্রত করেন। কারণ, কোরআনই পারে মানুষকে সত্যিকার সফলতার পথে পরিচালিত করতে। হাদিসে এসেছে, কোরআন কিয়ামতের দিন তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে।
শয়তানের প্ররোচনা থেকে সতর্কতা
শয়তান সর্বদা মানুষকে সৎপথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে। তাই কোরআন পাঠের আগে আল্লাহর কাছে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে এর নির্দেশও দিয়েছেন।
গুনাহ মানুষের অন্তরকে কলুষিত করে এবং নূরানি জ্ঞান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কোরআন হলো আল্লাহর নূর, যা পবিত্র হৃদয়েই স্থান পায়। তাই সব ধরের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং তাওবার মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ রাখা জরুরি।
কোরআনের ফজিলত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন
কোরআনের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে জানা এর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। যারা কোরআনকে জীবনের মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের জীবনী অধ্যয়ন করলে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কোরআনের সত্যিকার ভালোবাসা দান করুন এবং এর আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।