প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৭
মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া হতে পারে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর অসীম রহমত অর্জন করা। এই রহমত লাভের পথ সহজ হলেও অনেকেই তা উপলব্ধি করতে পারেন না। কুরআন ও হাদীসে এমন বহু পন্থা বর্ণিত হয়েছে, যা অনুসরণ করলে একজন মুমিন সহজেই আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারে। ইসলামী শিক্ষায় বলা হয়েছে, নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা এবং মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন আল্লাহর রহমত লাভের কার্যকর উপায়। মহান আল্লাহ বলেন, “আমার রহমত সবকিছুকে পরিবেষ্টন করেছে”।
তাঁর রহমতের অন্যতম একটি দিক হলো, তিনি তাঁর বান্দার প্রতি সদয় এবং ক্ষমাশীল। নামাজ হচ্ছে এমন একটি ইবাদত, যা বান্দা ও রবের মধ্যে সোজাসুজি সংযোগ স্থাপন করে। নামাজে একাগ্রতা ও নিয়মিততা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ এবং তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। এ ছাড়াও রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে বান্দা নিজের গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর দরজাগুলো খুলে দেন।
দয়া এবং মানবিকতা ইসলাম ধর্মের একটি মৌলিক শিক্ষা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা পৃথিবীর লোকদের প্রতি দয়া করো, আসমানের অধিপতি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়, মানুষের প্রতি দয়া দেখানোও আল্লাহর রহমত পাওয়ার একটি উপায়। আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ দুঃখ-কষ্টে আছে, যাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। প্রতিদিন কিছু সময় নির্ধারিত করে কুরআন পড়া এবং তার উপর চিন্তাভাবনা করা মুমিনের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর। মহান আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমে আমাদের জীবনের সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন। এই আলোকিত পথেই রহমতের আশ্বাস রয়েছে, যেখানে কোনো বিভ্রান্তি নেই।
আরেকটি সহজ কিন্তু কার্যকর পন্থা হলো—তওবা করা। মানুষ চিরকালই ভুল করে, কিন্তু সেই ভুলকে স্বীকার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া বান্দার সৌভাগ্যের লক্ষণ। রাসূল বলেন, “তওবাকারী সেই ব্যক্তির মতো, যে গোনাহই করে নি।” আল্লাহ প্রতিটি খাঁটি অন্তরের আহ্বানে সাড়া দেন এবং তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে দেন বান্দার অপরাধগুলোকে।
ইসলামী জীবনধারায় এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পরস্পরের প্রতি সদয় হওয়া ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করা। সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুললে সেটিও আল্লাহর সন্তুষ্টির একটি কারণ হতে পারে। ব্যক্তিগত জীবন হোক বা পারিবারিক, একজন মুমিন যেন সবক্ষেত্রে ইসলামি শিষ্টাচার অনুসরণ করে।
আমাদের উচিত প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করা—আজ আমি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কী করেছি? এই আত্মমূল্যায়নের মধ্য দিয়ে একজন মুসলমান ধীরে ধীরে নেক আমলের প্রতি মনোনিবেশ করতে পারে। এর ফলে একদিকে আত্মা শান্তি পায়, অন্যদিকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথও প্রশস্ত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, আল্লাহর রহমত সবকিছুর ওপরে। আমাদের কাজ হচ্ছে সেই রহমতের দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করা। নামাজ, দয়া, তওবা ও কুরআনের আলোয় আলোকিত জীবন গড়ে তুললে আল্লাহ আমাদের উপর তাঁর রহমত বর্ষণ করবেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি দান করবেন।