মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নে চা-শ্রমিকদের জন্য সরকার নির্ধারিত এককালীন ছয় হাজার টাকা প্রাপ্তিতে ব্যাপক অনিয়ম ও ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের দুইজন মাইক্রো মার্চেন্ট আশিশ কর্মকার ও অপূর্ব তাতীর বিরুদ্ধে এই অনিয়মের অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা আঙুলের ছাপসহ বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতির প্রক্রিয়া শেষ করেও নির্ধারিত টাকা পুরোপুরি পাচ্ছেন না এবং ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও টাকা তুলতে পারছেন না।
সরকারি সমাজসেবা অধিদফতরের বাস্তবায়নে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬৪২ জন শ্রমিকের প্রত্যেককে ৬ হাজার টাকা করে মোট ৩৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই অর্থ ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আঙুলের ছাপ গ্রহণ করে সরাসরি উপকারভোগীর হাতে পৌঁছানোর কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়নি। অভিযোগে বলা হয়, দুই মাইক্রো মার্চেন্ট জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে কেটে নিয়ে ৫৮০০ বা ৫৯০০ টাকা দিচ্ছেন।
সরেজমিনে বটগাছ চৌমুহনী ও জগন্নাথ মন্দির এলাকায় অবস্থিত ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট দোকানে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিক দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ দুই দিন আগেই বায়োম্যাট্রিক কার্যক্রম শেষ করেও টাকা তুলতে পারেননি। আবার যারা পেয়েছেন, তারা কম টাকায় সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
উপকারভোগী দুখনী তাতী, বাণী তাতী, সুনীল পাল ও পরমেশ্বরীসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কম দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত এজেন্ট আশিশ কর্মকার অভিযোগ অস্বীকার না করে বলেন, শহরে তো ১৫০ টাকা পর্যন্ত কেটে নেয়, আমরা কম রাখছি। অন্যদিকে, অপূর্ব তাতীর ভাই তপু তাতী জানান, টাকা না থাকায় বিতরণ সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোয়েব হোসেন চৌধুরী বলেন, অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কমিশন কাটা যায় কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার নন বলে জানান তিনি। কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা বলেন, এমন অভিযোগ খুবই দুঃখজনক এবং বিষয়টি এখনই খতিয়ে দেখা হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি এখন জানলাম। তদন্ত করে অনিয়ম প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, এর আগেও মির্জাপুর ইউনিয়নে অনিয়মের কারণে দুইজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এবারও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এই অনিয়ম শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটি একজন শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার হরণ। সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্প যদি মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে, তাহলে প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত হবেন এবং জনসচেতনতায় আস্থা হারাবে। তাই অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সার্বিক তদারকি জোরদার করার দাবিও উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।