প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ২১:৫৪
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা বাগানের ছোট একটি টিলার ঘরে বেড়ে ওঠা ইতি গৌড় প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তিন বোনের মধ্যে ছোট এই মেয়েটিই এলাকার প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন। তার এই অর্জনে গোটা বাগানে বইছে আনন্দের ঢেউ।
ইতি বরমচাল মিশনারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষার যাত্রা শুরু করে বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ৪.৬৭ ও ইউছুফ গণি কলেজ থেকে এইচএসসিতে ৪.৮৩ জিপিএ অর্জন করেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল ও ঢাবির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শেষ পর্যন্ত ইতি বেছে নিয়েছেন তার স্বপ্নের গন্তব্য— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ। ইতি জানান, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও
হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। জাহাঙ্গীরনগরে অপেক্ষমাণ তালিকায় এবং জগন্নাথে ব্যর্থতা তাকে খানিকটা নাড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে ভর্তি হলেও ঢাবির ফলাফলে সুযোগ পেয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ঢাকাতেই নতুন যাত্রা শুরু করেন। ইতির মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন চা শ্রমিক, যিনি প্রায় দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাবা শংকর গৌড় একসময় বাপেক্সে নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন, বর্তমানে তিনি অসুস্থ এবং কর্মক্ষম নন। এই বাস্তবতা সত্ত্বেও মেয়েদের শিক্ষায় ছিল অটুট আস্থা। বড় দুই মেয়ে স্মৃতি ও
সুইটি ইতিমধ্যে পড়াশোনা শেষ করে সংসার জীবন কিংবা পেশাগত শিক্ষায় এগিয়ে গেছে। তাই ইতি ছিল সবার চোখের তাড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ইতি জানায়, পড়াশোনা শেষ করে সে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) হতে চায়। তার মতে, ভালো রেজাল্টই তাকে স্বপ্নপূরণে সহায়তা করবে। ইতির এ অর্জনে বাবা শংকর গৌড় আবেগে ভাসিয়ে বলেন, একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কোনো অতিথি আসলে মনে হতো,
এমন কিছু যদি আমাদের ঘরেও থাকত! আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ইতির সফলতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বরমচাল চা বাগানে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেকেই আর্থিক সহায়তা ও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। চা বাগানভিত্তিক শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো তার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। ইতি শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছে।