রমজানের অন্যতম শিক্ষা তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা। ২৮তম রোজা পার হয়ে মাহে রমজানের শেষ দশকও সমাপ্তির পথে। আমাদের তারাবিহ, তেলাওয়াত, দোয়া ও ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে বলেছেন, অনেকে রোজা রাখলেও কেবল উপোস থাকা ছাড়া তাদের কিছুই অর্জিত হয় না, অনেকে রাত জেগে ইবাদত করলেও নিদ্রাহীনতা ছাড়া কিছুই লাভ হয় না। তাই রমজানের শিক্ষা শুধু উপবাস নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য ও সংযম অনুশীলন করা।
সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন হলেও এর ইহকালীন প্রভাবও বিশাল। রমজান ধৈর্যশীলতা শেখায়, অপরের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করতে উদ্বুদ্ধ করে। হাদিসে এসেছে, রোজাদারকে ইফতার করানো, দান-সদকা করা, মিথ্যা ও ঝগড়া থেকে বিরত থাকা ইবাদতের অংশ। ইসলামের সামগ্রিকতা এখানেই—পরকালীন মুক্তির সঙ্গে ইহকালেও মানুষের প্রতি সদাচার চর্চা করা।
হিংসা-বিদ্বেষ দূর করাও রোজার অন্যতম শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সবরের মাস তথা রমজানের রোজা অন্তরের হিংসা দূর করে। প্রকৃত রোজাদার কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না, বরং সে মানুষের কল্যাণ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। রোজা আত্মশুদ্ধির এক মহান সুযোগ, যা আমাদের নৈতিক উন্নতি সাধনে সহায়ক।
রমজানের আরেক শিক্ষা হলো, আত্মত্যাগ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। রোজা শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণা সহ্য করার নাম নয়, বরং এটিকে পরিপূর্ণ করতে দরিদ্রদের সহায়তা, সদকাতুল ফিতর আদায় ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে মানবিকতা ও সামাজিক সংহতি দৃঢ় হয়।
রোজার মাধ্যমে একজন মুসলিম নিজেকে গঠন করতে পারে পরিপূর্ণ একজন খোদাভীরু মানুষ হিসেবে। এ মাস আমাদের শুধু ইবাদত শিক্ষা দেয় না, বরং পারস্পরিক সহানুভূতি, ক্ষমাশীলতা ও মানবিকতা চর্চারও দীক্ষা দেয়।
রমজানের শিক্ষা যদি আমরা বছরের বাকি মাসগুলোতেও ধরে রাখতে পারি, তাহলে তা আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ সুগম করবে। প্রকৃত সিয়াম সাধনার অর্থ শুধু রমজানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা আমাদের সারাজীবনের পথচলার অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত।
রমজান বিদায় নিলেও এর শিক্ষা আমাদের জীবনে স্থায়ী হওয়া দরকার। আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও মানবতার বন্ধন বজায় রাখাই রোজার প্রকৃত সাফল্য। যদি আমরা এই শিক্ষা ধারণ করতে পারি, তবে ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ পাব ইনশাআল্লাহ।