সার্কের বিকল্প আঞ্চলিক জোটের পথে চীন-পাকিস্তান, যুক্ত বাংলাদেশও

দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সংহতি জোরদার করতে চীনের নেতৃত্বে পাকিস্তান একটি নতুন জোট গঠনের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে এবং সেই উদ্যোগে বাংলাদেশের অংশগ্রহণও নিশ্চিত হয়েছে। চীনের কুনমিং শহরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এই সম্ভাব্য জোট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। দীর্ঘদিন ধরে সার্ক কার্যত অচল হয়ে পড়ায় এর বিকল্প হিসেবে এই নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা।

পাকিস্তান ও চীন মনে করছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি সক্রিয় জোটের প্রয়োজন আছে। আর সেই চাহিদা পূরণ করতেই তারা সম্ভাব্য নতুন এই জোট নিয়ে কাজ করছে। প্রথম ধাপে বাংলাদেশসহ তিন দেশের এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলেও ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানকেও অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

তবে ভারতের প্রতি এই উদ্যোগ যে সরাসরি বার্তা দিচ্ছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কারণ, সার্কের অকার্যকর হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব এবং ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থভিত্তিক কূটনীতি। যদিও ভারতকেও নতুন জোটে আহ্বানের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তবুও ধারণা করা হচ্ছে দিল্লি এতে সাড়া দেবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে নির্ধারিত সার্ক সম্মেলন ভারত ও বাংলাদেশ বয়কট করায় তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর থেকে সার্ক কার্যত মৃতপ্রায়। এমন প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও চীন যৌথভাবে বিকল্প একটি আঞ্চলিক সংস্থা গঠনের পরিকল্পনা নেয় যাতে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা সহজ হয়।

বৈঠকের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ধাপে ধাপে বৃহৎ আঞ্চলিক সংযোগ গড়ে তোলা এবং একে সার্কের কার্যকর বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ফলে এই নতুন জোট দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সদস্য দেশগুলোর আন্তরিকতা ও কৌশলগত বাস্তবতার ওপর। বিশেষ করে ভারত যদি একে পাশ কাটিয়ে চলে তবে জোটটি কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবুও পাকিস্তান-চীনের নেতৃত্বে এই নতুন আঞ্চলিক চিন্তা একটি ভিন্ন কূটনৈতিক ধারা তৈরি করতে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।