প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১১:২৩
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৮১ জনে, যাদের মধ্যে বহু শিশু ও নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় এই হামলাগুলো চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছে চার শতাধিক মানুষ, যারা আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গাজা শহরের একটি স্টেডিয়ামের কাছে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু লক্ষ্য করে চালানো এক হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক।
বিবিসি যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, স্থানীয়রা খালি হাতে এবং কোদাল দিয়ে বালু খুঁড়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ উদ্ধার করছে। আহমেদ কিশাউই নামের এক ফিলিস্তিনি জানান, ওই এলাকা তাঁবুতে পরিপূর্ণ ছিল, আর এখন সেগুলো বালুর নিচে চাপা পড়ে আছে। তিনি বলেন, তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নিজস্ব শক্তিতে মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্টেডিয়ামের পাশের এই ঘটনায় কেউ সন্ত্রাসী ছিল না, কেবল শিশু ও নিরীহ মানুষ ছিল বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি তাঁবুতে বিমান হামলায় আরও ১৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনটি শিশু ও তাদের বাবা-মা ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণ হারান। তাদের দাদি সুয়াদ আবু তেইমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "এই শিশুরা কী অপরাধ করেছিল?" তিনি সন্ত্রস্ত কণ্ঠে প্রশ্ন তোলেন, কেন তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু করা হলো।
এছাড়াও গাজার তুফফাহ মহল্লায় জাফা স্কুলের কাছে আবারও বিমান হামলা চালানো হয়, যেখানে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এতে পাঁচ শিশুসহ আরও আটজন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ হাবুব জানান, এই হামলায় তার ভাগ্নে, বাবা ও প্রতিবেশীদের সন্তানরা নিহত হয়েছে এবং তিনি প্রশ্ন করেন, কেন ইসরাইল তাদের উপর এই নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে।
চলমান হামলার কারণে বহু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং রাস্তাগুলো অচল হয়ে পড়ায় অনেক অ্যাম্বুলেন্স বা সিভিল ডিফেন্স কর্মী আহতদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। মার্চ মাসে শুরু হওয়া এই নতুন দফার সংঘর্ষে আগের দুই মাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তিও ধসে পড়েছে।
গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। হামাস জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা চেষ্টা করলেও আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যেই তেলআবিবে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির দাবিতে আবারও বড় সমাবেশ হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, আর নয় যুদ্ধ, এবার সবাইকে বাড়ি ফেরানোর সময় এসেছে।